পেটই চলছে না, করোনার টেনসন করি ক্যামনে
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বস্তিবাসীরা দোকান গড়ে তুলেছেন
গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাতে এক বিকট শব্দে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল বস্তিবাসী। প্রচণ্ড ধোঁয়ার পর আগুনের ফুলকি। পুড়েছিল ৭৩টি বসতঘর। ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক পরিবার যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই ফের করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধের ঘোষণা দেয় সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (১ মে) দুপুরে কল্যাণপুর পোড়া বস্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে কয়লা হওয়া ঘরগুলো নতুন করে গড়া হয়েছে। বস্তিকে ঘিরে বাইরে ভাঙারি দোকানগুলোও সেজেছে। তবে সেসব দোকানে ক্রেতা খুবই কম। সঙ্গে বস্তির পরিবারগুলোর কর্মক্ষম অনেকেই বেকার জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে নাকাল অবস্থায় রয়েছেন পরিবহন ও মাটিকাটা পেশায় জড়িত শ্রমিকদের অনেকেই।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কাউন্সিলর, এনজিও ব্র্যাকসহ কিছু দাতা সংস্থা আগুনের পর ও লকডাউনে ত্রাণ দিলেও তা চাহিদার তুলনায় ছিল নগণ্য। কথা হয় বস্তিবাসী আব্দুল কালাম মাঝির সঙ্গে। ১৪ বছর আগে ভোলার চরফ্যাশন ছেড়ে আসা কালামের কাছে এ বস্তিই শেষ আশ্রয়স্থল। নাতিদের নিয়ে এখানেই থাকছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমার পাঁচ ছেলে। দুই ছেলে বস্তির বাইরে থাকে। ওরা ভালই আছে। তবে এখানে তিন ছেলে আর নাতিসহ আমরা ৯ জন আছি। গত ৩০ অক্টোবর রাতে আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়। শুধু জীবন নিয়ে সবাই ঘর থেকে বের হতে পেরেছিলাম। যখন গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, তখনই আবার করোনা চলে আসে। লকডাউনে জীবন বড়ই কঠিন হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, চলমান লকডাউনেই মারা গেছেন স্থানীয় এমপি। কাউন্সিলর ত্রাণ দিছে। কিন্তু বসে বসে তো দিন চলে না। অল্প ত্রাণে মাস যায় না। হয় কাজ করার সুযোগ নয় সারা মাস চলার ত্রাণ দেওয়ার অনুরোধ জানান কালাম মাঝি।
বাসা বাড়িতে কাজ করতেন বস্তির বাসিন্দা বিউটি বেগম। স্বামী রিকশা চালাতেন। অসুস্থতার কারণে সারাবেলা আর রিকশা চালাতে পারেন না। এরমধ্যে করোনার কারণে বিউটি বেগমের কাজটাও চলে যায়। যে বাসায় কাজ করতেন সে বাসার মালিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কোথাও কাজ মেলেনি। এ অবস্থায় বিউটি বেগমের আবেদন ত্রাণের।
পোড়া বস্তিতে দুটো ঘর নিয়ে বসবাস করতেন ভাঙারি দোকানদার মো. লিটন। প্রেসার মেশিনে বিভিন্ন লোহা, টিন আর প্লাস্টিক চাপ দিয়ে ছোট করার কাজ চলাকালেই বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর সেখানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
লিটন বলেন, বস্তিটি বারবার পুড়েছে। পুড়তে পুড়তে এর নাম হয়েছে পোড়া বস্তি। ৩০ বছর ধরে বসবাসের কারণে বস্তিটি আর ছাড়া হয়নি। আবার যখন গুছিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছি, তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এলো। কেনাবেচা নাই, ঘরে খাবার নাই, পুনর্বাসনের উদ্যোগ নাই, ত্রাণ এলেও পুরো বস্তিতে তা পৌঁছে না কখনও।
বস্তির বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, দেশে করোনা মহামারি আকার নিয়েছে। যেখানে মাইনষে মাস্ক পরে, অকারণে ঘরে থেকে বের হয় না, সেখানে আমাদের অভুক্ত পেটের দুশ্চিন্তা। পেটেই যেখানে চলে না, সেখানে করোনার টেনসন করি ক্যামনে।
কল্যাণপুর ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০ কেজি চাল ও দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লকডাউন চলাকালেও ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য এই ত্রাণ সবার ঘরে পৌঁছেনি। ঈদের আগে লিস্ট করে সবার ঘরে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব।
জেইউ/আরএইচ