ছবি: সুমন শেখ

করোনা শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয় এ বছর এপ্রিলে। মাসটিতে রেকর্ড সংখ্যক করোনা শনাক্ত ও প্রাণহানি হয়েছে। এপ্রিলে জেলায় ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। আর করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৬২২ জন। করোনায় গত ১৩ মাসে এত মৃত্যু ও আক্রান্ত আর দেখেনি চট্টগ্রাম। 

এর আগে গত মার্চ মাসে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ১৩ জন। মার্চে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ২৮৪ জন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনায় সব বয়সের মানুষই এখন আক্রান্ত হচ্ছেন। আর যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছেন। বয়স্কদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন প্রচুর সংখ্যক তরুণ। 

তিনি আরও বলেন, সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু মানুষ যেভাবে মার্কেটে যাচ্ছে, তাতে আবারও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। একমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনা সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। 

এপ্রিলে সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার এই ধরনটির বিস্তার এবং ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা খুব বেশি। এ কারণে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু বেড়েছে। করোনায় রোগীর অবস্থাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত।

তিনি আরও বলেন, এই ধরনটা দ্রুততার সঙ্গে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত করে। যারা আগে থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের ফুসফুস সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। 

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে একদিনে সর্বোচ্চ ৫২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর একদিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ১১ জন মারা যান ২৫ এপ্রিল। 

এর আগে করোনার শুরু থেকে চট্টগ্রামে সবচেয়ে মহামারি অবস্থা ছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। ওই সময় মৃত্যু এবং সংক্রমণ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। শনাক্তের সংখ্যা ও হারের দিক থেকেও তা বেশি ছিল। জুন মাসে মোট মারা যান ১০৩ জন। সে মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৮৮৩ জন। জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৫৫ জনের। আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৩২৭ জন। আগস্ট মাসে আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ৬৬০ জন। আর মৃত্যু হয় ৩৯ জনের।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, সোমবার (৩ মে) পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ২৮০ জন। আর মারা গেছেন ৫৩৫ জন। আর এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৯০৫ জন্য। আর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৫২০ জন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই বয়স্ক মানুষ। এছাড়া অনেকেই চিকিৎসার আওতায় আসছেন দেরিতে। এটাও মৃত্যু হার বাড়ার কারণ। এছাড়া নতুন ধরনে যুবকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্রুত তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। যদিও তাদের মৃত্যু হার কম। 

তিনি বলেন, লক্ষণ দেখা দিলেই করোনা শনাক্তে পরীক্ষা করাতে হবে। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। বিশেষ করে বয়স্কদের ব্যাপারে কোনো অবহেলা করা চলবে না।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা চলবেন তারা বেঁচে থাকবেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ৫২০ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৩৮৫ জন আর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১৩৫ জন। তাদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষই ৭৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ ৪১৬ জন। ১ থেকে ১০ বছর বয়সী মারা গেছেন ৪ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৪ জন। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মারা গেছেন ২৪ জন। ৭ জন মারা গেছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী আর ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সী মারা গেছেন ৫ জন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ দশমিক ১৭ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর। সংখ্যার হিসেবে যা ২১ হাজার ৫৫০ জন। ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯ হাজার ২১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। আর ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ৭ হাজার ৬১০ জন। চট্টগ্রামে ৬০ ঊর্ধ্ব বয়সী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ৭৫৭ জন। 

সবচেয়ে কম করোনায় আক্রান্ত হয়েছে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীরা। যার সংখ্যা ১ হাজার ২৫২ জন, যা মোট আক্রান্তের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট আক্রান্তের ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বা তিন হাজার ৫২৪ জন। 

কেএম/এইচকে