দোকানপাট-শপিংমল খোলা ও যানবাহন চালু করে দেওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ফের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, এমন শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সুমন শেখ

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার এক হাজার ৯১৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। 

এক সপ্তাহ আগে এপ্রিলের ২৭ তারিখে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১ জন, সেদিন মারা গিয়েছিলেন ৭৮ জন। তারও এক সপ্তাহ আগে ২০ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন ৯১ জন। আর আক্রান্ত ছিলেন ৪ হাজার ৫৫৯ জন। করোনা ভাইরাসের চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিল ৭ এপ্রিল। সেদিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৬২৬ জন। আর সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ১৯ এপ্রিল, ১১২ জন।   

সে হিসেবে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমার চিত্র স্পষ্ট। এটিকে সুখবর বললেও তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরং তাদের শঙ্কা- ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দোকানপাট-শপিংমল খোলা ও যানবাহন চালু করে দেওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ফের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

দেশের হাসপাতালগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আট বিভাগে এই মুহূর্তে মোট কোভিড ডেডিকেটেড সাধারণ শয্যা রয়েছে ১২ হাজার ৩৪৭টি এবং আইসিইউ শয্যা এক হাজার ৯২টি। এর মধ্যে বহুসংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ায় এখন আট হাজার ৮৭৩টি সাধারণ এবং ৫৬৫টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নতুন করে করোনা ইউনিট চালু হয়। গত সাত দিন আগে চালু হওয়া হাসপাতালটির ১১৪ শয্যার করোনা ইউনিটে এ পর্যন্ত মাত্র সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ফাঁকা পড়ে আছে আইসিইউয়ের ১০টি শয্যা। রোগী না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক এবং নার্সরা।

এই প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সাতদিন আগে চালু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র সাতজন রোগী এখানে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে একজনের আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হয়েছিল। সব মিলিয়ে, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে ১৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এখন করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। তাই হাসপাতালে রোগীর চাপ কম। তবে চিকিৎসা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

আবার কয়েকদিন আগে মহাখালীতে চালু হওয়া ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালেও রোগীর তেমন চাপ নেই। হাসপাতালটি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০০ সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি রয়েছে ১৬৩টি। ১০০ আইসিইউ শয্যার মধ্যেও খালি পড়ে আছে ২৬টি। অথচ এক সপ্তাহ আগেও একটি আইসিইউ শয্যার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে হন্যে হয়ে রোগীর স্বজনদের ছুটতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা কমেছে, ফলে আমাদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও কমে আসছে। এটা একটা ভালো দিক।’

সংক্রমণ কমার কারণ কি লকডাউন?
দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের শেষের দিক থেকে চলতি বছরের শুরুর দুমাস নিম্নমুখি ছিল আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। মার্চে হঠাৎ বেড়ে যায় ভাইরাসের প্রকোপ। তবে গত মাসের তুলনায় এখন নিম্নমুখি দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। করোনা কি প্রাকৃতিকভাবে কমতে শুরু করেছে? এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে বলে একমত তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সংক্রমণের হার দেখতে পাচ্ছি কমে আসছে। তবে এটা লকডাউনের কারণে হচ্ছে না অন্য কোনো কারণে হচ্ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সংক্রমণ অনেক কমে গিয়েছিল। তখন তো লকডাউন ছিল না, আমরা দেখতে পেলাম যে এমনি এমনি কমে গেল। এখন আবার সংক্রমণ কমছে, সে কারণটা আসলে কী বলা যাচ্ছে না। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে লকডাউনের কারণে। তবে লকডাউন যে আসলে খুব বেশি কার্যকরী হচ্ছে, এমনটা না। সবমিলিয়ে, এটা বলা কঠিন যে লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘যানচলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হচ্ছে, দোকানপাট-শপিংমলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে, আবারও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এগুলো বড় ধরনের একটা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসবে। এখন যতটা সম্ভব এখান থেকে বেঁচে থাকা যায়। সে লক্ষ্যে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তা না হলে কিন্তু বড় ধরনের একটা বিপর্যয় খুব দ্রুতই আবার চলে আসবে।’

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে এটা অনেকটা আগ্রাসী ভূমিকায় ছড়িয়ে যেতে শুরু করে এবং মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। মূলত যখন সংক্রমণের হার খুব বেশি থাকে, তখন এর লাগাম টেনে ধরার জন্য লকডাউন দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হলো- মানুষকে ঘরবন্দি রেখে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দেওয়া। এর কারণ হলো, কারও ভেতরে যদি ভাইরাসটি থাকে সেটি যেন ছড়িয়ে যেতে না পারে। ওই ব্যক্তির ভেতরেই যেন ভাইরাসটির শেষ হয়। এ প্রেক্ষাপটে লকডাউন দেওয়া হয়।’

মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ এখনও তোলা হয়নি, অনানুষ্ঠানিকভাবে শিথিল হয়েছে কেবল। তাতেই রাস্তায় যানজট। ছবি: সুমন শেখ

লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এটি কার্যকর হয়েছে। এই যে সংক্রমণটা কমে এসেছে, আমার মনে হয়, লকডাউনের কারণেই কমে এসেছে।’

সংক্রমণ কমার কারণ জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই লকডাউনের প্রভাবে। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে, তা হলো- কিছুদিন আগে আমরা যেভাবে গেট-টু-গেদার করা শুরু করে দিয়েছিলাম, সেগুলো তো এখন একেবারেই বন্ধ। আমাদের বড় বড় অনুষ্ঠানগুলোও বন্ধ। লকডাউনের প্রেক্ষাপটে একই গাড়িতে বসে অনেক লোক যাওয়া সেটাও কমেছে। পাশাপাশি আরেকটা জিনিস হলো- ঢাকা থেকে প্রচুর লোক বাইরে চলে গেছে। ফলে ঢাকায় মোট জনসংখ্যাটাও কমে এসছে। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি থেকে করোনা তেমন বেশি একটা ছড়াতে পারে না। কিন্তু একটা জায়গায় আবদ্ধ পরিবেশে মিটিং করা, বিয়ের আয়োজন, গল্প-গুজব, খাওয়া-দাওয়া, এগুলো কিন্তু খুবই ভয়ংকর বিষয়।’

সংক্রমণ যেন না বাড়ে সে বিষয়ে করণীয়
দেশে সংক্রমণ কমলেও ঈদকে কেন্দ্র করে আবার তা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে প্রথম হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। কিন্তু আমরা তো সেই কাজটি যথাযথভাবে করতে পারছি না। দোকানদাররা বললেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় পরিচালনা করব। কিন্তু ওরা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কারণ, দোকানে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতারা আসছেন, তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অসচেতন। আবার বিক্রেতাদের মধ্যেও কিছু আছেন, যারা একটু অন্যরকম। তারা নিজেদের করোনার চেয়েও শক্তিশালী মনে করেন। সবমিলিয়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়ছে কি-না? সেটা দেখার জন্য পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। আর সেই পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। 

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে এলেও আমাদের এখন করণীয় হলো, কমে আসার সংখ্যাটা এবং ধরনটাকে ধরে রাখা। এখন যদি সবকিছু আবার খুলে দেওয়া হয়, তাহলে আগের মতো হয়ে গেল। কিন্তু সরকার শপিংমল, মার্কেট, যানচলাচল খুলে দিয়েছে। এতে সংক্রমটা আবার বাড়াবে বলে আমি মনে করি। 

তিনি বলেন, যেসব আবদ্ধ জায়গায় অনেক লোক একত্রে থাকে এবং সেখানে এয়ারকন্ডিশন থাকে, বায়ু প্রবাহিত যদি না করে, তাহলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর একটি উপযুক্ত পরিবেশ হয়ে যায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেওয়া উচিৎ হয়নি। একইসঙ্গে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রেখে নগরের মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলতে পারে, তাহলে হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু যদি সেটা না হয়, তাহলে কিন্তু ফলাফলটা ভয়ংকর আকার ধারণ করবে।’

এ চিকিৎসক বলেন, শপিংমল-দোকানপাটে যেভাবে ভিড় হচ্ছে, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক ছাড়া যারা বের হয়, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এই কাজগুলো করা দরকার এই কারণে, লকডাউনের ফলাফলটাকে ধরে রাখার জন্য। নয়তো আবার ভারতের ভ্যারিয়েন্ট যদি এই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তাহলে দেশের জন্য আরেকটা বিপদ তৈরি হবে।’

লেলিন চৌধুরী বলেন, সংক্রমণ বাড়ে মূলত কয়েকটি কারণে। এক হচ্ছে, মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা। এই কাজটি করার জন্য পাড়া-মহল্লায় আমরা একটি গণতদারকি কমিটি করতে পারি। এই কমিটি এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে যেভাবে নির্বাচনের সময় ভোট চাইতো, তারা সেভাবে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বলে আসবে। তাদের কাজ হলো সবাইকে সচেতন করা, যেন মাস্ক ছাড়া কেউ বাইরে না যায়। যদি কেউ বাইরে যায় তাহলে তাকে ঠেলে আবার ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে এটাকে প্রতিরোধ করা এবং বাইরে থেকে কেউ যদি মাস্ক ছাড়া মহল্লায় আসতে চায় তাকে আটকে দেওয়া। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বা রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে এটি করা যেতে পারে। বিশেষ করে করোনাপ্রবণ যে অঞ্চলগুলো আছে, সেগুলোতে এই কাজটি করা যেতে পারে। এটি হলো মাস্ক পরার ক্ষেত্রে।

লেনিন চৌধুরী মনে করেন সংক্রমণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে, জমায়েত বা ভিড়। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, ধর্মীয় ওয়াজ-মাহফিল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমস্ত সভা সমাবেশ অন্তত আরও দুই মাসের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। 

এছাড়া তার আরও সুপারিশ- বাস-ট্রেনসহ মহানগর, আন্তঃজেলার যে যানবাহনগুলো আছে, সবগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। একইসঙ্গে শপিংমল, দোকানপাটগুলোকে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিসে’র বিষয়ে পরিষ্কার একটা সতর্কবার্তা দেওয়া। দোকানে যদি তারা মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতাকে ঢুকতে দেন বা কোনো কিছু বিক্রি করেন, তাহলে সেই দোকানটি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

লেনিন চৌধুরী আরও বলেন, নতুন স্ট্রেইনের কারণে সংক্রমণ খুব দ্রুতই ছড়িয়ে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আমাদের জিনোম সিকোয়েন্স বাড়াতে হবে। এতে করে দেশে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট এলে দ্রুত সেটিকে শনাক্ত করা যায়। এই কাজটি নিয়মিত করা গেলে আমরা অসাবধানতার জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের শিকার হবো না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরিস্থিতি আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্তে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সতর্কতা জারি রাখতে হবে। এই কাজগুলো করতে পারলেই করোনা রোধ করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।’

যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, করোনা সংক্রমণ কমলেও এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে যেকোনো মুহূর্তে আবার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদেরও। 

অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ, সেটি কমতে শুরু করেছে। আমরা যদি সর্বশেষ সোমবার পর্যন্ত দেখি, শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এতে করে আমাদের আত্মতুষ্টি বা করোনা চলে গেছে, এমন ভাবার সুযোগ নেই। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে যেকোনো মুহূর্তে আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। 

তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে, বিভিন্ন শপিংমলে, দোকানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়েছে। অনেকেই ঈদের বাজার করতে বের হচ্ছেন। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিল, সেটি করা হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি পালনে অবহেলা করছেন মানেই কিন্তু আপনারা আশপাশ থেকে সংক্রমিত হয়ে পরিবার ও নিকটজনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।’

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখছি, অনেকেই বাইরে মাস্ক খুলে ইফতার খাচ্ছেন, তারা ভাবছেন এতে করে বিপদের আশঙ্কা নেই। এতেও সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। আপনারা বাইরে এসে খাবার গ্রহণ একেবারেই এড়িয়ে চলুন। বাইরে এসে কোনো অবস্থাতেই যেন মাস্ক খোলা না হয়, সঠিক নিয়মে যেন সেটি ব্যবহার করা হয়। শারীরিক দূরত্বও যেন মেনে চলা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা যে বিধিনিষেধের কথা বলছি, এটা কিন্তু আমাদের সবাইকে মিলেমিশে করতে হবে। কাঁচাবাজার, দোকানপাট, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন প্রত্যেকে যদি বিধিনিষেধগুলো প্রতিপালন করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ঝুলিয়ে রাখেন এবং নিজেরা সচেতন থাকেন তাহলে কাজটি সহজ হয়ে যায়।

টিআই/এফআর/এনএফ