আসন্ন ঈদুল ফিতরের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের বকেয়া মজুরি ও বোনাস (উৎসব ভাতা) প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বন্ধ পাটকল ও চিনিকল শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।

শুক্রবার (৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত ‘লকডাউনে’র সুযোগে মালিকদের দুরভিসন্ধি, অবহেলা ও সরকারের মালিকতোষণ নীতির কারণে শ্রমিকরা মজুরি-বোনাস নিয়ে দুর্ভোগের পাশাপাশি ছাঁটাই এবং লে-অফের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। গার্মেন্টস মালিকরা প্রণোদনা পাওয়ার পরও মজুরি পরিশোধে নানা রকম তালবাহানা করেছেন। গত বছর গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনাসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা আদায় করেন। তারপরও শ্রমিকদের পূর্ণমজুরি ও বোনাস পরিশোধ করেননি। অথচ করোনা পরিস্থিতিতেও শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই হতে এপ্রিল পর্যন্ত) তৈরি পোশাক রফতানি করে ২৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেন মালিকরা। যা গত বছরের তুলনায় ৬.২৪ শতাংশ বেশি। শুধু এপ্রিল মাসেই আয় হয় ৩.১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৬ গুণ বেশি। তারপরও মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি-বোনাস প্রদানে সরকারি প্রণোদনা চেয়ে নানারকম কূটকৌশলের আশ্রয় নেন।

তারা আরও বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ, দূরপাল্লার বাস, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লকডাউনের কারণে বন্ধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নিম্ন আয়ের কর্মজীবী অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে করোনার কারণে নতুন করে গত এক বছরে আড়াই কোটি মানুষ বেকার হয়েছেন এবং ৪২ শতাংশ শ্রমিকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। এ রকম অবস্থায় সরকারের ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ২৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা যে গত বছরের ন্যায় পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে শেষ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বক্তারা বলেন, করোনাকালীন সময়ে গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ব্যাপক লুটপাটের ফলে ২০২০ সালে দেশে ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের এই দুঃসহ সময়ে কোনো মালিক কিংবা সরকার তাদের সহায়তা করছে না। এমনকি বন্ধ পাটকল-চিনিকলের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাও পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান না করে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া সরকারের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মো. খলিলুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটো, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান খান প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি