স্বজনরা আসেননি, নারীর শেষকৃত্য করলেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা
হিন্দু নারীর শেষকৃত্যে আল মানাহিলের স্বেচ্ছাসেবকরা /ছবি- সংগৃহীত
‘গতকাল আমার মাকে গোসল করাইছে, কাপড় পরাইছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জামে মসজিদের পাশের একটা রুমে। লাশ বহন করা ও দাহ করার সময় উপস্থিত ছিলেন দুইজন হুজুর। সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন তারা। যেখানে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ছিলেন না, সেখানে তারা দুইজন অন্য ধর্মের হয়েও সঙ্গে ছিলেন। আমার সহকারীসহ আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
মায়ের শেষকৃত্যে এগিয়ে আসা অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নিরুপম দাশ নামে এক ব্যক্তি।
বিজ্ঞাপন
আত্মীয়-স্বজন কেউ পাশে না থাকলেও অন্য ধর্মের একজনের শেষকৃত্য করে মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল মানাহিলের সদস্য আসাদুল্লাহ, ইসমাইল ও আবদুল্লাহ। তিনজনই মাদরাসায় পড়ালেখা করছেন। মাদরাসা বন্ধ থাকায় এখন আল মানাহিল টিমের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন তারা।
এ ব্যাপারে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চিফ কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে আমাদের কাছে ফোন আসে। এমন ফোন আসলেই আমরা ছুটে যাই। এখানে কে কোন ধর্মের এটা দেখা হয় না। বরং মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করি। এই মহামারিকালে সবার পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের কাছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নেই। বৃহস্পতিবারও (৬ মে) আমরা সেই চিন্তা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছি।’
বিজ্ঞাপন
গতকাল আমার মাকে গোসল করাইছে, কাপড় পরাইছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জামে মসজিদের পাশের একটা রুমে খালারা। লাশ বহন...
Posted by নিরুপম দাশ on Thursday, May 6, 2021
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিরুপম দাশের মায়ের মৃত্যু হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চেয়ে ফোন আসে মানাহিলে। রাত ৯টার দিকে মানাহিল টিম সেখানে ছুটে যায়। হাসপাতালে মানাহিলের নারী টিমের সদস্যরা নিরুপমের মাকে গোসল করান। তারপর নিরুপমের সঙ্গে গিয়ে রাতেই বোয়ালখালী এলাকার একটি শ্মশানে শেষ বিদায়ের যতটুকু সাহায্য করা যায় সবই করেন মানাহিল টিমের সদস্যরা।
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘করোনাকালে আমরা দুই হাজার মানুষের দাফন-কাফন ও শেষকৃত্যের কাজ করেছি। এর মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একশ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন।’
কেএম/ওএফ/জেএস