তুবা এখন বুঝে গেছে মা আর ফিরবে না
গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেণু
তুবা বলতো মা বিদেশে আছে। বিদেশ থেকে আসবে। এখন বুঝতে পেরেছে তার মা আর কখনো আসবে না। এখন মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে সে চুপ হয়ে যায়। মন খারাপ করে, অভিমান করে। রাতে মায়ের কথা মনে হলে ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ বসে থাকে। একটু আদর বা গল্প করলে তারপর ঘুমায়।
ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেণুর মেয়ে তুবার দিন কাটে এখন এভাবে। কথাগুলো ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেণু। ছেলেধরা সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওইদিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের সড়কে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।
২০১৯ সালে কেবল তাসলিমা বেগম রেণু নন, পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগছে- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর আরও বেশ কজন গণপিটুনির শিকার হন। ঢাকায় রেণুকে পিটিয়ে হত্যা করার কয়েকদিন আগে নেত্রকোনায় এক যুবকের ব্যাগ থেকে এক শিশুর কাটা মাথা উদ্ধারের ঘটনা ওই গুজবে ঘি ঢালে।
বিজ্ঞাপন
টিটু ঢাকা পোস্টকে বলেন,‘রেণুর ছেলে তাসিন আল মাহির ও মেয়ে তাসমিন মাহিরা তুবা দুজনে ভালো আছে। মাহির এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, আর তুবা প্রথম শ্রেণিতে। এখন সে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।’
টিটু বলেন,‘আমাদের পরিবারের কারো মনের অবস্থা ভালো না। এরপরেও আমাদের মনে একটু স্বস্তি এসেছে যে, মামলাটির এখন বিচার শুরু হয়েছে। আমাদের পরিবারের সবাই আদালতে হাজির হয়ে বিচার কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে।’
এ মামলায় গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক।
এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর গত ১ এপ্রিল ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতেমা ইমরুজ কনিকা ১৫ জন আসামির মধ্যে ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বাকি দুই আসামি জাফর ও ওয়াসিম শিশু হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গত ৩১ মার্চ শিশু আদালতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু পলাতক ছিলেন আসামি মহিউদ্দিন। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি পলাতক আসামি মহিউদ্দিন আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিদের মধ্যে তিনজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- ওয়াসিম, হৃদয় এবং রিয়া বেগম।
মামলার আসামিরা হলেন- শাহীন (৩১), মো. বাচ্চু মিয়া (২৮), বাপ্পি (২১), ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা (২০), মুরাদ মিয়া (২২), মো. সোহেল রানা (৩০), বিল্লাল (২৮), মো. আসাদুল ইসলাম (২২), রাজু (২৩), আবুল কালাম আজাদ (৫০), মো. কামাল হোসেন (৪০), ওয়াসিম (১৪), রিয়া বেগম ময়না (২৭) মো. জাফর হোসেন (২০) ও মহিউদ্দিন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মাইদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ মামলায় সব আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। বাদীপক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করছি। খুব শিগগিরই মামলা নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।’
টিএইচ/জেইউ/এনএফ