বনানীর আগুনের কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ, ক্ষতি কোটি টাকা
বনানীর ১১ নম্বর রোডে লেকের ধারে অবস্থিত ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় স্যামসাং মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ফেয়ার গ্রুপের অফিসে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
এমনটাই দাবি করেছেন ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা ফেয়ার গ্রুপের কর্মীরা। তিন দফায় ফায়ার ইস্টিংগুইশার ব্যবহারের পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় অফিসের কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে ভবনের ছাদে উঠেন। এরপর পাশের ভবনে লাফিয়ে পড়েন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১১ মে) বেলা ১১টা ৪২ মিনিটের দিকে বনানী ১১ নম্বর রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মোট ৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানান, দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি অগ্নি নিয়ন্ত্রক দল।
বিজ্ঞাপন
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, আগুনের কারণে পুরো ভবন কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন লোকজন সিঁড়ি জাতীয় একটি মাধ্যম ব্যবহার করে লাফিয়ে পাশের একটি ভবনে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। এভাবে প্রায় ১০০ জন পাশের ভবনের ছাদে গিয়ে জীবন রক্ষা করেন বলে জানা গেছে।
আগুনের পর সরেজমিনে দেখা যায়, থাই গ্লাস ভেঙে ভবনের ভেতরে আটকে থাকা ধোয়া বের করে দেওয়া হচ্ছে। ভবনটির আশপাশ থেকে মানুষজন ও যানবাহন সরিয়ে নেওয়া হয়।
আগুনের ঘটনায় ফেয়ার গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (বিপণন) কামরুল আহসান বলেন, ফেয়ার গ্রুপের এই অফিসে তিন ফ্লোর মিলে প্রায় তিনশ মানুষ কাজ করেন। আগুনের সূত্রপাত ঘটে তৃতীয় তলায়। আগুনের সময় আমি নিজে স্পট ছিলাম।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে কামরুল আহসান বলেন, প্রথমে বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। স্পার্ক হতে হতে কাছে থাকা একটি কম্পিউটারের সিপিউতে আগুন লেগে যায়। এরপর ধীরে ধীরে ধোয়া ও আগুন বেড়ে পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে যায়। প্রথমে আমরা ফায়ার ইস্টিংগুইশার ব্যবহার করি। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সব ছেড়ে আমাদের বেরিয়ে আসতে হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, বলা যায় তিন তলার সবই পুড়ে গেছে। প্রায় ৭০/৮০ জনের ডেস্ক, কম্পিউটারের মনিটর, সিপিউ, দামি সব ল্যাপটপ মোবাইল পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে কোটি টাকার বেশি মালামাল পুড়ে গেছে।
এর আগে ফেয়ার গ্রুপ হেড অব মার্কেটিং তানসিন কবীর বলেন, প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের তিন তলার অফিস পুরো অন্ধকার হয়ে যায়। আমরা জীবন বাঁচাতে এদিক সেদিক ছুটতে থাকি। পাশের ভবনের লোকজন আমাদের ছাদ থেকে তাদের ছাদে মই ব্যবহারে যেতে সাহায্য করে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩ এর উপ-সহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ বলেন, ধোয়ার কারণে ভেতরে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। তেজগাঁও ও বারিধারা ইউনিটের সহযোগীতায় ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নির্বাপণ সম্ভব হয়।
আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মাত্র আগুন নির্বাপণ করেছি। আগুনের কারণ আমরা নিরূপণ করতে পারিনি। তবে ফেয়ার গ্রুপের কর্মীরা জানিয়েছেন তিন তলার একটি জায়গা থেকে স্পার্ক হয়ে আগুন ধরে যায়।
জেইউ/এমএইচএস