বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২০’ সময় উপযোগী পদ্ধতি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে প্রসার ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মাল্টি পারপাস হলে আয়োজিত দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সপ্তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনাবেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সুবিধা করোনার এই কঠিন সময়ে আমাদের জীবনকে রক্ষা করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ
রাষ্ট্রপতি বলেন, আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা, এখন প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ৩০০ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালের আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সারাদেশে অপটিক ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ৩৪০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১৮৫০০ সরকারি অফিস একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। সারাদেশের ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ১৩ হাজারের ওপরে উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে, যার অর্ধেকই নারী। জনগণের সেবা পাওয়া সহজলভ্য করার জন্য আরও ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিজ্ঞাপন
করোনা পরিস্থিতির সময় অনলাইন জীবনকে রক্ষা করেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনাবেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের কার্যক্রম, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সুবিধা করোনার এই কঠিন সময়ে আমাদের জীবনকে রক্ষা করেছে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশের ফলে আমাদের সামনে অনেক শিল্প বিপ্লবের সুযোগ তৈরি করেছে। এতে করে আমাদের দেশের তরুণরা প্রতিবছর নতুন করে শিল্প বাজারে প্রবেশ করছে। ৫ লাখ ৮৫ হাজার তরুণকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ তরুণ-তরুণীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির জগতে হাইটেক শিল্পের বিকাশের জন্য সরকার সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করেছেন। সবকিছু চালু হলে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং এক অনন্য মাত্রা স্থাপন করেছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বর্তমানে এ দেশের সাড়ে ৬ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার আছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের আইটি সেবা এখন আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে আইটি খাতে রফতানি ২৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমানে দেশে লাল ফিতার জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই। এটার কারণ হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দুর্নীতি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আইটি সেক্টরে আমরা ২০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চাই। তার জন্য আমাদের দেশে যে চাহিদা আছে, সেই চাহিদা যাতে আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা পূরণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অংশগ্রহণের জন্য www.digitalworld.org.bd এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন করার পর ভার্চুয়াল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড দেখতে অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এই অ্যাপে যখন লাইভ করা হবে তখন রেজিস্টার্ড দর্শনার্থীর কাছে মেসেজ আসবে। অ্যাপ ডাউনলোড সম্পন্ন হলে এর মাধ্যমে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২০-র প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যাবে এবং সেমিনার ও কনসার্টে অংশগ্রহণ করা যাবে।
প্রদর্শনী সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই আয়োজন এবার আমরা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে করেছি। আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি। আর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ডট ওআরজি নামে যে ওয়েবসাইট তৈরি করেছি, সেটি আপনারা ঘুরে দেখবেন। সবকিছুই হবে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনটেন করে আর ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বর্তমানে অনলাইনের ব্যবহার অনেক এগিয়ে গেছে। যার ফলে সেখানে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো অনলাইনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটা নীতিমালা তৈরি করা হোক। আর তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবে বেসিস।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমত উল্লাহ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়াজ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতিম দেব প্রমুখ।
এইচএন/এনএফ