ঈদের আগে ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সারাদেশে চলছে সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধ। এতে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যান চলাচল। কিন্তু বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে করোনার ঝুঁকি নিয়েই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ। 

করোনা পরিস্থিতিতে ঈদ উপলক্ষে সরকারের দেওয়া তিন দিনের ছুটির আজই শেষদিন। আগামীকাল থেকে সবাইকে যোগ দিতে হবে নিজ নিজ কর্মস্থলে। যে কারণে সড়কে চাপ বাড়বে ঈদফেরত মানুষের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এতে করে বাড়বে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।

এদিকে ঈদে বাড়ি যাওয়া মানুষের ফেরা বিলম্বিত করার পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। শুক্রবার (১৪ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেছেন, লকডাউনের মধ্যে মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দলে দলে বাড়ি গেছেন, একইভাবে ফিরে এলে তাতে ঝুঁকি বাড়বে। এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এই ফেরাটা একটু বিলম্বিত করা গেলেই ভালো। আবার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে যদি তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ট্রাকে করেও মানুষ বাড়িতে গেছেন

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা বলতে এবার কিছুই নেই। বাধা ভেঙে যাত্রীরা বাড়ি গিয়েছেন। ফেরার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত যে হবে তার ব্যবস্থাপনাও নেই। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তাতে আরও বাড়বে।

শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ঈদের পর শহরমুখী জনস্রোতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, ঈদ পরবর্তীকালে শহরমুখী জনস্রোত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে, দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চালুর জোর দাবি করেছেন। শুক্রবার সকালে পরিবহন শ্রমিকরা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি, সংসদ সদস্য শাজাহান খান রাজধানীর সায়েদাবাদে বক্তব্য রাখে। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে ফেরার ক্ষেত্রে দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিতে পারে সরকার। না হলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

সরকারি বিধি নিষেধে ট্রেন ও  লঞ্চ চলাচলও বন্ধ। ফলে বিকল্প যানবাহনে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরবেন যাত্রীরা।  বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদে যারা বাড়ি গেছেন তারা কিভাবে ফিরবেন- এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানী ছেড়েছেন কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ। দেশের একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বিকেল  পর্যন্ত তাদের তথ্যভাণ্ডার ও কলপ্রবণতা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানায়। তারা বলছে, ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর (একক ব্যবহারকারী) সংখ্যা ৬৫ লাখ। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না এমন তরুণ ও শিশুর সংখ্যা এই হিসাবে আনা হয়নি।

তার আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘গত ৪ থেকে ১১ মে পর্যন্ত ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে গেছেন ৬০ লাখ ৭২ হাজার ১৭৮ জন।

করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল

এবার বাড়ি থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমপক্ষে ৬৫ লাখ যাত্রী ফিরবেন বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে বাড়ি যাবার সময় যাত্রীর ঢল কেউ ঠেকাতে পারেনি। ফেরার সময় তা ঠেকাতে হবে। দূরপাল্লার বাস চালু করে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে তাদের বাড়ি থেকে ফেরালে শৃঙ্খলা থাকবে।

পিএসডি/এমএইচএস