সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে প্রথম আলো পরিবার।

মঙ্গলবার (১৮ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি করেন পত্রিকাটির সাংবাদিকরা।

মানববন্ধনে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, রোজিনা ইসলাম একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা আইনগতভাবে তার জামিনের আবেদন করেছি। এখানে যে আমরা দাঁড়িয়েছি এর মাধ্যমে আমরা চাই তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয় এবং তাকে যেন নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে যারা হেনস্তা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আনিসুল হক বলেন, তার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও হতে পারে। এটা একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। যেমন আজকে রিমান্ডের আবেদন না করলে আমরা জামিন পেতেও পারতাম। কিন্তু একজন নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি এটা একটা মিথ্যা মামলা। আমাদের আইনজীবী আদালতে বলেছেন এটা কোনো মামলাই দাঁড়ায় না।

তিনি বলেন, তাকে যে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে তাতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়নি। আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যে এই দেশটি সাংবাদিকদের নিপীড়ন করা একটি দেশ। সাংবাদিকদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ বাংলাদেশ। আসলে আমরা এমন একটি দেশ চাই না। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, এটা সরকার, দেশ ও মানুষের জন্য দরকার।

মানববন্ধন থেকে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, রোজিনা ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। তার সাংবাদিকতার সুনাম শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রয়েছে। গত কিছু দিন ধরে যেহেতু কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে সেহেতু তিনি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন। তার রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতের অনেক অনিয়ম উঠে এসেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগের অনিয়মসহ তার বেশ কিছু রিপোর্ট আলোচিত হয়েছে। আমাদের শক্ত ধারণা, এসব রিপোর্টের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের আক্রোশের শিকার রোজিনা ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি আইনের পথে মোকাবিলা করব। আমরা আদালতের প্রতি আস্থাশীল। রোজিনা কোনো অন্যায় করেননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এভাবে সাংবাদিকতা করে এসেছেন। তার এই সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাংবাদিকতা, দেশ ও মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

এভাবে যদি কাউকে থামিয়ে দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে সত্য সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সহজ কথা। আমি রোজিনা বলে বলছি না সবার জন্য বলছি। বাংলাদেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতার চূড়ান্ত স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের যে অনুচ্ছেদগুলো দেওয়া হয়েছে সেখানে একটি অনুচ্ছেদ সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এখানে সংবাদপত্র নয় সংবাদ ক্ষেত্র বলা হয়েছে, সেটা পত্রিকা হোক আর ডিজিটাল মাধ্যমই হোক। পরবর্তীতে ডিজিটাল অ্যাক্ট, অফিস সিক্রেসি অ্যাক্টসহ যেসব আইন এসেছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলোর মাধ্যমে ক্রমাগত সাংবাদিকতার পথ সংকুচিত হয়েছে। সাংবাদিকরা এসব আইনের বিরোধিতা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এই ঘটনাগুলো তারই নজির, কেন আমরা এসব আইনের বিরোধিতা করেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম আলোর যে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে সেখানে রোজিনা ইসলামের মুক্তির বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের পক্ষে বলা খুব কঠিন। তবে আমরা বলতে পারি, আইনের পথে আমাদের যা করা দরকার আমরা করব এবং আমরা সেভাবে বিষয়টি দেখছি। আজকে আমাদের আইনজীবী যেভাবে যুক্তি দিয়েছেন আদালতে এবং সংবিধান আমাদের পাশে আছে, আমরা আশা করি ন্যায় বিচার পাব।

মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ বলেন, পেশাদার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। সেই সঙ্গে তাকে হেনস্তাকারী, নির্যাতনকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্তপূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি দুর্নীতিবাজ আমলাদের দুর্নীতি ঢাকার জন্য তাদের যে প্রচেষ্টা সেগুলো বন্ধ করা দরকার। সব আইনে তাদের হেফাজত করা হচ্ছে। আর গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কীভাবে আটকানো যায় সে জন্য তারা আইন করছেন। এ আইন রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিরা করছেন না। যারা আইন করছেন তারা কিন্তু সব সরকারের আমলেই আছেন।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, সরকারকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এভাবে রোজিনাকে হেনস্তা করেছে। তারা দুটি ধারায় একটি মামলা দিয়ে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু রোজিনা ইসলাম আজ কারাগারে নয়, সমগ্র গণমাধ্যম আজ কারাগারে।

এমএসি/এসকেডি/জেএস