প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং হেনস্তাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর সাংবাদিক নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বুধবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও হেনস্তাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি ও হুঁশিয়ারি জানানো হয়।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হক বলেন, আমরা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার উত্তরসূরী, সেলিনা পারভীনের হাতে, চোখে, পেছনে যে হাত বেঁধেছে, সে প্রেতাত্মারা কিন্তু এখনো জীবিত আছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সোচ্চার হতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, আজকে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এই সময় স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আঘাত আমরা কেউই মেনে নিচ্ছি না। সরকার যদি এই রোজিনা ইসলামের হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত হবে। তা না হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনুজ্জ্বল হতেই থাকবে। আর স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দুর্নীতি দমন কমিশনের এগিয়ে আসা উচিত। ঐদিন সচিবালয়ে কী ঘটেছে সে বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের অর্থ সম্পাদক মাসুদুল হক বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। যার ফলে তিনি আজ কারাগারে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। যারা অন্যায়ভাবে তাকে হেনস্তা করেছে তাদের আমরা শাস্তির দাবি জানাই। এছাড়া যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি তে আমরা আশ্বস্ত নই। আমরা চাই অন্য মন্ত্রণালয়ের নিরপেক্ষ অফিসার দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, আমাদের বোন, সহকর্মী রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। আমরা আশা করব আগামী বৃহস্পতিবার আদালত যে জামিনের শুনানি করবে, সেই শুনানিতে আমাদের বোন মুক্ত হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীতে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা কী করব, আপনারা কী করবেন সম্মিলিতভাবে সেই নির্দেশনা দেব। সে পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে বলছি।

মানববন্ধনে অন্যরা বলেন, ১৭ মে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএস এর রুমে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। যা আইনের চরম লঙ্ঘন। মন্ত্রণালয়ের একজন নারী কর্মকর্তার মারমুখী আচরণ গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি। সাংবাদিক রোজিনার প্রতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আচরণ ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। একের পর এক তাদের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তারা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। ঘটনার দিন সিনিয়র সাংবাদিকরা বার বার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করলেও তারা কর্নপাত করেননি। যেসব দুর্নীতির রিপোর্ট বন্ধ করার জন্য রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করা হয়েছে, সেটা কখনোই বন্ধ হবে না। বরং আমরা সরকারের সব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখোশ উন্মোচন করব।

যৌথভাবে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট, বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক পরিষদের সংবাদকর্মীরা। এছাড়াও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএন/জেডএস