৭ বছরে আড়াই শতাধিক চুরি, চক্রের প্রধানসহ গ্রেফতার ৩
বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা নিয়ে ঘুরে ঘুরে টার্গেট ঠিক করা। পরে সুযোগ বুঝে গভীর রাতে গ্রিল কেটে বাসা বা অফিসের ভেতর প্রবেশ করে মালামাল চুরি। এভাবে ৭ বছর ধরে আড়াই শতাধিক চুরি সংঘটিত করেছে চক্রটি। সর্বশেষ চট্টগ্রাম নগরীর জুবলি রোড এলাকায় বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স অফিসের গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে চুরির ঘটনায় চক্রের মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। জব্দ করা হয়েছে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা।
শনিবার (২২ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ৩ জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান উপপুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৮ মে চট্টগ্রামের জুবলি রোডের আমাফা সেন্টারে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সে লোহার গ্রিল কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোরচক্রটি লোহার সিন্দুক ভেঙে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া চোরচক্রটি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, জুবলি রোড শাখার জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এ ঘটনায় ১৯ মে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
বিজ্ঞাপন
উপকমিশনার বিজয় বসাক বলেন, মামলা দায়েরের পর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় চোরচক্রে জড়িত সিএনজি ড্রাইভার মাহফুজকে (৩০) শুক্রবার কোতোয়ালি থানার পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা থেকে চাপাতিসহ গ্রেফতার করা হয়। মাহফুজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মো. মনির হোসেন (৪০) চুরির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী।
শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. মনির হোসেন ও তার স্ত্রী খুকি বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে তাদের বসতঘর থেকে ২৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার মো. মনির হোসেন একজন পেশাদার চোর। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চুরি করছেন। চুরির পাশাপাশি বিশ্বকলোনী শাপলা গ্যাস লাইন এলাকায় তার একটি ভাঙ্গারির দোকান আছে। তার চোরাইকৃত মালামাল ওই দোকানে রেখে তিনি বিক্রি করেন।
তিনি আরও বলেন, মনির হোসেন প্রতিদিন রাত সাড়ে এগারটার পর চুরি করার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত সিএনজি ড্রাইভার মাহফুজের সিএনজি নিয়ে বের হন। বের হওয়ার পর তারা বিভিন্ন অফিসের বিল্ডিং টার্গেট করেন। যেখানে অন্ধকার পরিবেশ দেখেন সে এলাকায় সিএনজি থামিয়ে মনির হোসেন বিভিন্ন অফিসের পিছনের রাস্তা দিয়ে পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠেন। পরে কৌশলে অফিসের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে চুরি করেন। চুরির সময়ে মাহফুজ সিএনজি নিয়ে আশপাশের এলাকায় রাউন্ড দিয়ে পুলিশকে পাহারা দিতে থাকেন। চুরি শেষে মনির হোসেন সিএনজি ড্রাইভার মাহফুজকে কল দিলে মাহফুজ সিএনজি নিয়ে যথাস্থানে চলে আসেন। পরে সিএনজিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। চুরি শেষে সিএনজিতে বাসায় যাওয়ার পর মাহফুজকে প্রতিদিন চোরাই টাকা যা পায় তার ভাগ দিয়ে দেয় মনির। বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সে চুরির পর মাহফুজকে ১০ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা মনির তার স্ত্রী খুকুমনির কাছে রেখে দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মনির হোসেন ৭-৮ মাস আগে কোতোয়ালী থানার নজির আহমেদ রোডের লায়লা মঞ্জিলের ৩য় তলার একটি বেসরকারি অফিসে ২০ হাজার টাকা চুরি করেন। ১ বছর আগে রাজাপুকুর লেইন এলাকার কাগজের ৩টি গোডাউন হতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন সিলভার জাতীয় মালামাল ও তার চুরি করেন। ৮-৯ মাস আগে চকবাজার গুলজার মোড়ের ক্যাপেচিনো নামক রেস্টুরেন্টের জানালার গ্রিল কেটে রেস্টুরেন্টের ক্যাশবাক্স থেকে নগদ ৩৬ হাজার টাকা ও ১টি এলইডি মনিটর চুরি করেন।
ওসি আরও বলেন, চোরচক্রটি গ্রিল কেটে প্রবেশের পর কোনো অফিস বা স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ডিভিআর মেশিনটি খুলে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখেন, যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে। সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তারা সকল প্রকারের কৌশল অবলম্বন করেন। মনির হোসেন এর আগে আকবর শাহ থানা ও খুলশী থানার চুরির মামলায় দুই বছর জেলে ছিলেন।
কেএম/এইচকে