ইনসেটে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান

আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা, যা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

সোমবার (২৫ মে) ওয়াসার বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে অংশ নেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, দাম বাড়ানোর পর আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বর্তমানে ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করে দিতে হচ্ছে। 

অন্যদিকে নতুন দাম কার্যকর হলে বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা। যা আগে দিতে হত ৪০ টাকা।

পানির দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব গত মার্চ মাসে দিয়েছিলেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। পরে অবশ্য করোনাকালে পানির দাম বাড়ানো নিয়ে সমালোচনার তোপে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ঢাকা ওয়াসা।

করোনার শুরুর দিকে গত বছরের এপ্রিলেও এক দফা পানির দাম বাড়িয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। সে সময় প্রতি ইউনিটে দাম বাড়ানো হয়েছিল ২ টাকা ৮৯ পয়সা। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে যখন করোনা ফের খারাপ রূপ ধারণ করছে, সেসময়ে এসে সোমবারের বোর্ড সভায় ফের পানির দাম বাড়িয়ে দিল ওয়াসা।

তবে ওয়াসা বলছে, ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ২৮ টাকা। সে কারণে পানির দাম বাড়ানো জরুরি প্রয়োজন। এ ছাড়াও মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতেও মূল্য বৃদ্ধি করা দরকার। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ এর ২২ (২) ধারা অনুযায়ী ওয়াসা বোর্ড অনধিক ৫ শতাংশ হারে পানি ও পয়ঃঅভিকর সমন্বয় করতে পারে।

এরা আগে ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু করোনাকালে এমনিতেই অসহায় অবস্থায় আছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে পানির দাম বাড়ানো আসলেই অমানবিক। এতে করে করোনাকালে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে ওয়াসার প্রতি। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক, গ্রাহকের ওপর এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া নির্যাতনমূলক ব্যাপার এটি।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, সোমবারের ওয়াসার বোর্ড সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে অংশ নেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। ওয়াসার বোর্ড সভার সদস্য ১৩ জনের মধ্যে কয়েকজন মত দেন যে, সার্বিক বিবেচনায় এখনই পানির দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। কিন্তু পানির দাম বাড়াতে শুরু থেকেই তাকসিম সবচেয়ে তৎপর ছিলেন। আইন অনুযায়ী প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো যায় এবং দাম না বাড়ালে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এমন সব যুক্তিতে পানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, শারীরিক চিকিৎসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কারণ দেখিয়ে তিন মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।

গত ২৫ এপ্রিল হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত অথবা যাত্রার তারিখ হতে তিনমাস (প্লাস ট্রানজিট) মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালীন সেখান থেকেই ভার্চুয়ালি অফিস করছেন তিনি। গত ১২ এপ্রিল নিজের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তিনি নিজেই উল্লেখ করেন, আমার শারীরিক চিকিৎসা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কারণে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত অথবা যাত্রার তারিখ থেকে তিনমাস (প্লাস ট্রানজিট) মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করব।

অফিসে আদেশে তিনি বলেন, দেশের বাইরে অবস্থান কালে আমি নিজে যেকোনো পলিসি এবং অন্যান্য বিষয়ে ই-নথি, ই-জিপি, ই-মেইল, ফেস টাইম, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করব। এ সময় ঢাকা ওয়াসা স্ব স্ব উইং প্রধানগণ তাদের নিজ নিজ উইং এর রুটিং কার্যাদি সম্পাদন করবেন এবং সার্বক্ষণিক আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন।

অফিস আদেশে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সময়ে কাজের সুষ্ঠ ধারাবাহিতার স্বার্থে ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) প্রকৌশলী আবুল কাশেম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন সভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন পাশাপাশি প্রতিনিধি নির্বাচন ও রুটিন কার্যদি সম্পাদন করবেন।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ওয়াসার বোর্ড সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে অংশ নেন তাকসিম এ খান। আর সেই বোর্ড সভা থেকেই করোনা মহামারির মধ্যে আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ওয়াসা। ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসাবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি নিজ পদে রয়ে গেছেন প্রায় ১২ বছর ধরে।

এএসএস/আরএইচ