চীন থেকে সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনছে সরকার। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে এসব টিকা দেশে আসা শুরু হবে।  

আজ মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের কাছ থেকে আমরা দেড় কোটি টিকা কিনবো। এ নিয়ে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। খুব শিগগিরই চুক্তি সম্পন্ন হবে। এগুলোর প্রথম চালান জুন-জুলাই থেকে দেশে আসতে শুরু করবে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা আনা হবে।’

প্রথম দিকে চীন তাদের কোভিড টিকাগুলো সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম তথ্য প্রকাশ করায় চীনা ভ্যাক্সিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়তার অভাব ছিল

গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর ফোনালাপ হয়। সে সময় উপহার হি‌সে‌বে বাংলা‌দেশ‌কে আরও ছয় লাখ ডোজ ক‌রোনার টিকা দেওয়ার কথা জানায় চীন। এর আগে গত ১২ মে বাংলাদেশ‌কে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছিল চীন।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ টেনে মোমেন বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন তারা টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ চীনের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। যৌথভাবে এই টিকার উৎপাদন করার বিষয়ে চীনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে।’
 
চীন থেকে টিকা আগে কেন আসেনি আজ তার একটা ব্যাখ্যাও দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চীনের টিকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতি ছিল না। যার কারণে আমরা আগে এটা আনতে পারিনি। এখন তারা অনুমোদন পেয়েছে। তাছাড়া আমাদের জরুরি প্রয়োজনের কারণে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন টিকা আনতে।’

টিকার সংকট দূর করতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও তাকিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ মি‌লিয়ন ডোজ ক‌রোনার টিকা চে‌য়ে‌ছে বাংলা‌দেশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে টিকা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের (এফডিআই) অনুমতি লাগবে। সে কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে।’

রুশ টিকা আনা প্রসঙ্গে মোমেন জানান, রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আমরা মনে করি, আগামী দিনে আমাদের টিকা সরবরাহের কোনো সমস্যা হবে না। 

এদিকে এরইমধ্যে বাংলাদেশে  চীনের সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রী অনন্যা ছালাম সমতাকে টিকা প্রয়োগ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর পর শাহীন আহমেদ ও নিয়ামুল হক নামের আরও দুজনকে টিকা দেওয়া হয়। 

জানুয়ারি মাসের শেষ থেকে অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার শুরু হয় বাংলাদেশে। কিন্তু ভারতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা বাংলাদেশে না পাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। তাই এখন বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ভারতের টিকা নিয়ে সংকট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

প্রথম দিকে চীন তাদের কোভিড টিকাগুলো সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে খুব কম তথ্য প্রকাশ করায় চীনা ভ্যাক্সিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়তার অভাব ছিল। তবে ৮ মে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে উদ্ভাবিত করোনা টিকার মধ্যে প্রথমবারের মতো সিনোফার্মের তৈরি করা কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।   

চীনে এবং অন্যান্য দেশে লাখো মানুষকে ইতোমধ্যেই এই টিকা দেওয়া হয়েছে। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মডার্না ভ্যাক্সিনের পর চীনের এই টিকাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।  

এনআই/এনএফ/জেএস