আরও ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি চায় নগরবাসী
যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন আবরার আহমেদ ফুট ওভারব্রিজ
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন আবরার আহমেদ ফুট ওভারব্রিজটি সবাই ব্যবহার করছেন আগ্রহ নিয়েই। কারণ এখানে যুক্ত করা হয়েছে চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলেটর। ফলে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার না হয়ে সবাই ব্যবহার করছেন ফুট ওভারব্রিজ।
শুক্রবার (২৮ মে) বিকেলে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। দলে দলে মানুষ এই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে সড়কের এক পাশ থেকে অন্যপাশে যাচ্ছেন। এমন ফুট ওভারব্রিজ পেয়ে খুশি ব্যবহারকারীরা।
বিজ্ঞাপন
এ ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারকারীদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবি এনামুল হক। ঢাকা পোস্টের কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে এসেছিলাম। কিন্তু মালিবাগ থেকে আসার কারণে শপিংমলটির বিপরীতে নামতে হয়েছে। এরপর যখন দেখলাম এখানে একটি চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে, এটি দিয়েই সড়ক পার হলাম।
তিনি বলেন, অন্য স্থানগুলোতে ফুট ওভারব্রিজ থাকে। সেগুলোর সিঁড়ি হয় উঁচু। এছাড়া ফুট ওভারব্রিজের ওপর নানা ধরনের অস্থায়ী দোকান, ভিক্ষুক, হকার, ছিন্নমূলদের বাস। যে কারণে স্ত্রী-সন্তান বা বয়স্কদের সঙ্গে নিয়ে এসব ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা যায় না। তখন মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়।
বিজ্ঞাপন
চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুট ওভারব্রিজটির পরিবেশ চমৎকার- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি পরিচ্ছন্ন। তাছাড়া এর ওপর হকারদের ভিড় নেই। তাই সবাই এটি আগ্রহ নিয়ে ব্যবহার করছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সড়কের মিডিয়ানে পুরোপুরি লোহার ব্যারিকেড দেওয়া। এ কারণে কেউ ইচ্ছে করলেও ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে পারছেন না। রাজধানীর অন্য ফুট ওভারব্রিজগুলোও এমনভাবে ঝুলন্ত সিঁড়িযুক্ত করা হোক। এতে করে নাগরিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করবেন।
আরেক পথচারী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এমন ফুটওভার ব্রিজ যদি রাজধানীর অন্যান্য স্থানেও থাকত, তাহলে ছোট-বড়-বয়স্ক কারও অনীহা থাকত না। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা চাই, এমন চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুট ওভারব্রিজ অন্যান্য স্থানেও করা হোক। তাহলে রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে। এমন চলন্ত ফুট ওভারব্রিজ থাকলে তখন আর কেউ এটি না ব্যবহার করে পারবেন না।
রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় ৮৭টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩২টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় ৪৯টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের রয়েছে পাঁচটি এবং রাজউকের রয়েছে একটি। এছাড়া নির্মাণাধীন এবং নির্মাণের পরিকল্পনায় আছে আরও কয়েকটি ফুট ওভারব্রিজ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৩১৯ দশমিক ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পটি ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার সড়ক, ১৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার নর্দমা, ২৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ফুটপাত, ১ হাজার ৭৭০টি ট্রাফিক সাইন এবং ৩৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনটি ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া আরও সাতটি ফুটওভার ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি যুক্ত করার কাজ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে পথচারীদের রাস্তা পারাপার সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নতুন করে ৩৬টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এই ৩৬টি ফুটওভার ব্রিজের মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আটটির দুদিকেই যুক্ত হবে চলন্ত সিঁড়ি। এ কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম চলছে। ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল এটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যে কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, সেগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি ৫০টি নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। সেই সঙ্গে ৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কের মিডিয়ান উন্নয়ন এবং ফুটপাতের পাশে গ্রিল লাগানো হবে।
যে ৩৬ স্থানে বসবে নতুন ফুটওভার ব্রিজ
মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, রামপুরা ব্রিজের সামনে, মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে, মোহাম্মদপুর রিং রোড শিয়া মসজিদ ক্রসিং, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, গাউছুল আজম অ্যাভিনিউ পূর্ব, প্রশিকা ক্রসিং মিল্ক ভিটা রোড, মাইলস্টোন কলেজ, মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ সিরামিক রোড, শিয়ালবাড়ী মোড়, মিরপুর সিরামিক রোড পেট্রোল পাম্পের পাশে, গরিবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ, কুড়িল চৌরাস্তা, নাবিস্কো ফ্যাক্টরির সামনে, বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, লুবানা হাসপাতাল, পুলিশ স্টাফ কলেজ, মহাখালী ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ অফিসের সামনে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, শ্যামলী ইন্টার সেকশন, সাত মসজিদ রোড গ্রাফিক্স কলেজের সামনে, রিং রোড আদাবর থানার পাশে, বসিলা রোড বেড়িবাঁধ বাঁশবাড়ি সড়কে, মাস্টার মাইন্ড স্কুল, নেভাল হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন, আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, ৬০ ফুট মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গুলশান-১ মসজিদের সামনে, গুলশান-২ আজাদ মসজিদের সামনে, গুলশান-১ শুটিং ক্লাবের সামনে, কোকাকোলা মোড়, টেকনিক্যাল ক্রসিং, মাজার রোড এবং রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট কচুক্ষেত।
যে আটটি ফুটওভার ব্রিজে থাকবে চলন্ত সিঁড়ি
মহাখালী ফুটওভার ব্রিজ অঞ্চল-৩, কাকলী, সিএমএইচ হাসপাতাল, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শ্যামলী ইন্টারসেকশন, শাহীন কলেজ এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনে।
এএসএস/আরএইচ