একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ ছবি: পিআইডি

জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে তিন হাজার ৮৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বৈদেশিক ঋণ পাঁচ হাজার ৭০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলন করেন।

মন্ত্রী জানান, ‘জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় দেশের সাতটি বিভাগ ও ১৯টি জেলা তথ্য অফিস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১০৩ কোটি টাকা। অক্টোবর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডিএমসি)।

এ প্রকল্পে ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য ব্যয় সাশ্রয়ী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর তথ্যকেন্দ্র (হাব) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মাধ্যমে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের জেলা তথ্য অফিসের সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তথ্য কমপ্লেক্সে নির্মিতব্য ডিজিটাল মাল্টিপারপাস সিনেমা হলে জনগণের মধ্যে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র দেখার অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ সালে এটি বাস্তবায়ন করবে বন অধিদপ্তর।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, সুন্দরবনের বন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। অবকাঠামো ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগ সুবিধার উন্নয়ন করা হবে। সুন্দরবন এলাকায় টহল জোরদার করার মাধ্যমে বন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, সুন্দরবনের সকল বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, রোগ বালাই ও সংরক্ষিত এলাকার বৈশিষ্ট্য ও প্রতিবেশ অবস্থার জরিপ, জলজ সম্পদের পরিমাণ নিরূপণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি ও পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা সংক্রান্ত জরিপ কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বিত বন ব্যবস্থাপনা ও পরীবীক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

প্রকল্পটি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার মোট ৩৯টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।

‘ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। নভেম্বর ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২৩ সালে এটি বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

‘জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (সিলেট জোন) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬১ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি এপ্রিল ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৫৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মেয়াদ সংশোধন করে বাড়ানো হয়েছে ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ল পাঁচ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।

এসআর/এফআর