প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য ভাতা এ বছর ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ‘নগদ’ এর মাধ্যমে বিতরণ করে সরকার। ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইল নম্বরে গত বছরের দুই প্রান্তিকের উপবৃত্তির টাকা গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বিতরণ করা হয়। 

আর এই টাকায় চোখ পড়ে প্রতারকচক্রের। গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে নগদ অ্যাকাউন্টের পিন এবং ওটিপি জেনে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় উপবৃত্তির ২৯ লাখ ৬২ হাজার ১৫৩ টাকা। 

এ বিষয়ে নগদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রতারণার অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন- রংপুরের মিঠাপুকুরের আবু বক্কর সিদ্দিক (৩২), মো. আসাদুল ইসলাম (৩৫) ও নরসিংদী সদরের খবিরুল ইসলাম (৩২)। রোববার সকালে (৩০ মে) ডিএমপির গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পৃথক দল তাদের রংপুর ও নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করে।  

নগদ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করার জন্যে একটি কমিটিও গঠন করে নগদ।

এর আগে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নগদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরও কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখতে কমপ্লায়েন্স টিমকে অনুরোধ করে। কমপ্লায়েন্স টিম অনুসন্ধান শেষে আরও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে মর্মে জানালে মামলা দায়ের করা হয়। 

ডিএমপির গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুরুতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নামে-বেনামে মোবাইল সিম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে তারা উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে কৌশলে তাদের পিন নম্বর জেনে টাকা হাতিয়ে নিতেন।  

রোববার যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার মধ্যে আসাদুল ইসলাম পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। তিনি আবু বক্করের মাধ্যমে এ প্রতারণায় জড়ান। তিনি প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম সংগ্রহ করতেন। আবু বক্কর সিদ্দিক নগদ, বিকাশের এজেন্ট ও মুদি দোকানদার। তার দোকানে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা উপবৃত্তির সময় ভিড় করতেন। 

উপবৃত্তির টাকা এসেছে কি না জানতে চাইলে আবু বক্কর সিদ্দিক কৌশলে ওই অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জেনে নিতেন। এরপর তাদের অ্যাকাউন্টে লগইন করে বৃত্তির টাকা নিজের সিমে সেন্ড-মানি করে নিতেন। আর অভিভাবকদের জানাতেন যে শিক্ষা বৃত্তির টাকা এখনও আসেনি। 

নরসিংদী সদর উপজেলার সাটিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাফতরি কাম নৈশপ্রহরী ছিলেন গ্রেফতার খবিরুল ইসলাম। তার কাছে অভিভাবকরা আসতেন শিক্ষাবৃত্তির টাকা এসেছে কি না জানার জন্য। এই সুযোগে কৌশলে খবিরুল অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদ অ্যাকাউন্টের পিন জেনে নিতেন। এরপর তাদের অ্যাকাউন্টে লগইন করে শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার ব্যক্তিগত নগদ অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন নম্বরে সেন্ড মানি করতেন। তিনিও অভিভাবকদের বলতেন যে, শিক্ষা বৃত্তির টাকা এখনও আসেনি। 

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন,প্রতারক আসাদুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক গত ১৭ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে ১০৫ জন অভিভাবকের কাছ থেকে ৪৮ হাজার ৫১৩ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে প্রতারক খবিরুল ইসলাম গত ১৫ ও ১৬ মার্চ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় ৮ হাজার ৩০৬ টাকা। 

এ বিষয়ে ‘নগদ’-এর হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স লে. কর্নেল মো. কাওসার সওকত আলী (অব.) বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের কারণে অপরাধী চক্র ধরা পড়েছে। এজন্য ‘নগদ’এর পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ‘নগদ’ ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কেউ অপরাধ সংগঠনের চেষ্টা করলে অপরাধীকে আইনের কাছে সমর্পণ করতে সব সময়ই আমাদের সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে। সরকারি আর্থিক সেবা হিসেবে গ্রাহকের তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তা বিধান আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা। 

জেইউ/এসকেডি/এনএফ