বাবুল আক্তার ও স্ত্রী মিতু/ ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। 

সোমবার (৩১ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত পাঁচলাইশ থানার জিআরও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন ভূইয়া।

মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর থেকে মুসাকে খোঁজে পাচ্ছে না পরিবার। মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিলেন মুছা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে পান্না আক্তার জবানবন্দি দিয়েছেন। 

তবে পান্না আক্তার জবানবন্দিতে কী বলেছেন- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পান্না আক্তার বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিডিয়াতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, জবানবন্দিতেও সেগুলোই বলেছেন। আমিও এখনও কাগজ পাইনি। কাগজ হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।

এর আগে গত ১৩ মে রাতে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, নিজের কথা ভেবে, স্বামীর ফিরে আসা এবং সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয়ে এতদিন চুপ থেকেছি। মুখ খুলিনি। কিন্তু এতদিনেও স্বামীকে ফিরে পাইনি। আজ যেহেতু সুযোগ এসেছে। আমি ভীত-সন্ত্রস্ত, আতঙ্কে আছি। তবুও জানতে চাই, আমার মুছা কোথায়?

মিতু হত্যায় মুছার জড়িত থাকার বিষয়টি আপনি বিশ্বাস করেন কি না— জানতে চাইলে পান্না আক্তার বলেন,  প্রথমে তো আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু ঘটনার পর অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন মুছা। কয়েকবার বাবুল আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখেছি। দু-একদিন পরই টের পেয়েছিলাম মুসা কোনো না কোনোভাবে মিতু হত্যায় জড়িত। আমি জানতে চেয়েছিলাম মুছার কাছে। তিনি বলেছিলেন, আমি করিনি, করিয়েছি। এছাড়া কোনো পথ ছিল না। নইলে আমার নিজেরই ক্ষতি হয়ে যেত।

স্ত্রী মিতুকে হত্যায় মুছাকে ব্যবহার করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। এজন্য কোনো কিছু হবে না মর্মে ‘শেল্টার’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন বাবুল আক্তার— বলেন মুছার স্ত্রী।

এর আগে আদালতে তিন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। তখন তারা বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুছাকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
 
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার (১১ মে) ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। তারপর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ফেনী কারাগারে রয়েছেন।

কেএম/আরএইচ