ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মিঠা পানির পুকুরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। ফলে মিঠা পানির পুকুরগুলো লবণপানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এতে সুপেয় পানির সঙ্কটে নিঝুম দ্বীপের ৬ হাজার হরিণের জীবন বিপন্নের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বুধবার (২৬ মে) ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭-৮ ফুট পানি বৃদ্ধিতে এসব পুকুর ডুবে যায়। নিঝুম দ্বীপের এসব পুকুর মায়াবী হরিণের মিঠাপানির একমাত্র উৎস ছিল। 

বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম সাইফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ৭ থেকে ৮ ফুট উঁচু জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের ৪টি পুকুর তলিয়ে যায়। এতে হরিণের সুপেয় পানির ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পুকুরগুলো প্রায় ৬ হাজার হরিণের সুপেয় পানির চাহিদা মেটায়। 

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিনাজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে দিন দিন হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জোয়ারের ফলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় হরিণের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানির পুকুরগুলো খনন করে চারপাশ উঁচু করলে আগামীতে বন্যার হাত থেকে হরিণ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করা যাবে।  

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার মো. আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুম দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সুপেয় পুকুরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে হরিণের জীবনযাত্রা। হরিণগুলো রোগাক্রান্ত হবে এবং তাদের প্রজনন থেকে শুরু করে শরীরবৃত্তীয় নানা কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন তৈরি হবে। মারাও যেতে পারে কিছু প্রাণী। লবণপানি পান করার কারণে হরিণছানাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।

নিঝুম দ্বীপের মিঠা পুকুরে যে লবণপানি প্রবেশ করেছে তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে কোনো পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুকুরের পানি পরিবর্তন করলে অথবা বৃষ্টি হলে পুকুরের পানিতে লবণাক্ততা কমে আসবে। প্রাণীরা তখন খাপখাইয়ে নিতে পারবে। ভবিষ্যতে জলোচ্ছ্বাসের বিষয় মাথায় রেখে পুকুরগুলোর পাড় উঁচু করতে হবে। পাড় বাঁধাইয়ের চেয়ে যদি মাটি দিয়ে পাড় উঁচু করে দেওয়া যায় এবং ঢালু করে দেওয়া যায় সেটা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণদাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুপেয় পানির সঙ্কট নিরসনে আমরা খুব দ্রুত প্রকল্প হাতে নেব। আশা করি এতে বিভিন্ন জলোচ্ছ্বাসে সুপেয় পানির সঙ্কট হবে না। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নিঝুম দ্বীপের হরিণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক হবে।

হাসিব আল আমিন/এইচকে