জলাবদ্ধ রাজধানীতে সীমাহীন দুর্ভোগ
মুষলধারে বৃষ্টিতে ডুবেছে রাজধানীর সড়ক
রাজধানীতে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোনো কোনো সড়কে জমেছে হাঁটু পানি, কোথাও কোথাও ফুটপাত পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। এর মধ্যে যারা অফিসে বা কাজে যোগ দিতে বের হয়েছেন, তারা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহনও অনেক কম দেখা গেছে।
বর্ষা বা বৃষ্টি মানেই রাজধানীবাসীর কাছে জলাবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। মঙ্গলবার (১ জুন) সকালে যারা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়েছেন, তারা এটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসগামী লোকজনকে ছাতা মাথায়, প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। আর যারা গণপরিবহন পাচ্ছেন না, তারা প্যান্ট গুটিয়ে পানি মাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রের দিকে রওনা হয়েছেন। অন্যদিকে সড়ক ডুবে যাওয়ায় কম গতির কারণে তৈরি হয়েছে যানজট।
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকায় দ্রুত পানি নামতে পারে না, ফলে প্রতিবারই এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই মতিঝিল, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, পুরান ঢাকা, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংকরোড ও বৈশাখী সরণির সামনের সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হাবিবুর রহমান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী জলাবদ্ধতার মধ্যেই ছাতা মাথায় নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তিনি বলেন, মহাখালী অফিসে যাব, কিন্তু গণপরিবহন কম তাই হেঁটেই সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছি। কিন্তু সড়কে, ফুটপাতে সব জায়গায় পানি, হাঁটাও যাচ্ছে না। কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে, তাই এরমধ্যেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সুলতান আহমেদ নামে এক পথচারী বলেন, প্রতিবছরই বৃষ্টি হলে রাজধানীতে এমন জলাবদ্ধতা হয়। সাধারণ মানুষ পড়ে ভোগান্তিতে। কিন্তু এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। যারা আজ কাজে বের হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। কোথাও হাঁটু পানি, কোথায় গণপরিবহন সংকট- ভোগান্তি আছেই। এছাড়া সুযোগ বুঝে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে।
সিরাজুল ইসলাম নামে একজন অটোরিকশা চালক বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে, এর মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। তারপরও আমরা যাত্রী পৌঁছে দিই। মানুষেরও প্রয়োজন আর আমরাও বৃষ্টির মধ্যে যাত্রীসেবা দিচ্ছি, তাই একটু বেশি ভাড়া চাই। হাতিরঝিলের দিক থেকে আসার সময় গুদারাঘাটের আগে পানি জমা ছিল, সেখানে আসার পর আমার গাড়িরও ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঠেলে এনেছি, এখন ঠিক হয়েছে। এসব কারণে আমরা একটু ভাড়া বেশি চাইছি।
মিরপুর এলাকায় সাব্বির নামে এক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি একটি কাজে গুলিস্তান যাব। কিন্তু বৃষ্টির জন্য গাড়ি পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। আধা ঘণ্টার বেশি সময় হলো দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত হবে। আবার কোথাও কোথাও দিনভর বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টিরও আভাস রয়েছে। এ কারণে নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, থেমে থেমে রাজধানীতে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এএসএস/জেডএস/জেএস