কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা শিক্ষা, জীবিকা, দক্ষতা উন্নয়নসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা চান। 

মঙ্গলবার (১ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়েছে যে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান।

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দুই সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও ও গিলিয়ান ট্রিগসের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গাদের চাওয়া-পাওয়া এবং রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এটা মনে রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। কক্সবাজার এবং ভাসানচরে তাদের থাকার যে ব্যবস্থা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করে দেওয়া হয়েছে তা সাময়িক। রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। ইউএনএইচসিআরসহ সবাইকে এ বিষয়ে গঠনমূলক কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ আশা করে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ ও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতিসংঘ নির্ধারিত দায়িত্ব এবং ম্যান্ডেটের মধ্যে থেকে কাজ করবে। রোহিঙ্গাদের বাস্তবসম্মত যেকোনো চাহিদা পূরণ বিবেচনা করতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের মূল কার্যালয়ের থেকে বাংলাদেশ সফরে আসা দুই সহকারী হাই কমিশনার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার ভাসানচর পরিদর্শন করে। এ সময়ে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা একত্র হয়ে আন্দোলন করেন। এক পর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে যান। কিছু রোহিঙ্গা হালকা আহত হয়েছেন। যখনই প্রতিনিধি দলটি ভাসানচর ত্যাগ করে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রোহিঙ্গারা দুই সহকারী হাই কমিশনারের কাছে তাদের হতাশা এবং প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তার উদ্বেগের কথা মুক্তভাবে প্রকাশ করেছেন। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হতে মরিয়া তারা। সেই সঙ্গে তৃতীয় কোনো দেশে তাদের স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন রোহিঙ্গারা।

শিক্ষা, জীবিকা, দক্ষতা উন্নয়নসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতিসংঘের উপস্থিতি চেয়েছেন। রোহিঙ্গারা দুই সহকারী হাই কমিশনারকে এও নিশ্চিত করেছেন যে, তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছেন।

ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজাও ও গিলিয়ান ট্রিগস রোববার (৩০ মে) চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সোমবার (৩১ মে) ভাসানচর পরিদর্শনে যান তারা। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পর ইউএনএইচসিআরের সদর দফতরের প্রতিনিধিদের প্রথম ভাসানচর সফর এটি।

এর আগে, ওআইসি সহকারী মহাসচিব, জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং রাষ্ট্রদূতদের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছে। এবং বিভিন্ন ঘটনা ভুলভাবে তুলে ধরছে, যাতে বাংলাদেশ সরকার চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে। এ ধরনের প্রচারণা বাংলাদেশের মানবিকতার মহানুভবতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। সাময়িক ব্যবস্থাপনার ওপর অযাচিত সমালোচনা স্থায়ী সমাধানের দিক থেকে নজর সরিয়ে দেবে।

এনআই/আরএইচ