মহাখালী ডিওএইচএস-এ তামাক কারখানা : পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা মহাখালী ডিওএইচএস-এ দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) কোম্পানি। তবে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ও আইন লঙ্ঘন করে কীভাবে এই কারখানা সেখানে পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন।
সোমবার (২৬ মে) আবাসিক এলাকায় সিগারেট কারখানা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি— শীর্ষক এক অনলাইন ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনে আলোচকরা এ উদ্বেগ জানান। আলোচনাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বক্তারা বলেন, এই কারখানার কারণে শুধু স্থানীয় পরিবেশ নয়, শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কারখানাটি থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ বায়ুদূষণের মাধ্যমে ফুসফুসের রোগ, হাঁপানি ও অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ ছড়াচ্ছে।
বক্তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া ছাড়পত্র নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তোলেন এবং অভিযোগ করেন যে, দুর্নীতির মাধ্যমে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারা এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেন।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় উন্নয়ন বিকল্পের (উবিনীগ) পরিচালক সীমা দাস সীমু বলেন, বহু বছর ধরে আবাসিক এলাকায় এমন একটি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা চলতে দেওয়া এলাকাবাসীর প্রতি অবিচার।
ইপসার পরিচালক নাসিম বানু শ্যামলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তামাক কোম্পানিগুলো নানা প্রভাব খাটিয়ে আইনকে পাশ কাটিয়ে চলছে।
সাফ-এর নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে যে মাত্রায় পানি ও জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, তা কৃষি ও পশুপালনের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. অনুপম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক। এর একটি বড় কারণ তামাক ব্যবহার। আবাসিক এলাকায় এ ধরনের কারখানা থাকা শুধু অনৈতিকই নয়, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
বিইআরের প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, ২০২৩ সালে তামাকজনিত রোগ ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের কারণে বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, ১৯৯০ সালে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় কারখানাটি সরানোর, কিন্তু বিএটি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এখনও অবস্থান করছে। এমনকি তামাককে ‘লাল’ শ্রেণি থেকে ‘কমলা’ শ্রেণিতে এনে পরিবেশ ছাড়পত্রও পেয়ে যায়, যা স্পষ্টতই অনিয়ম।
আলোচকরা বিএটি’র মহাখালী কারখানা অবিলম্বে অন্যত্র সরিয়ে সেখানে পরিবেশবান্ধব গ্রিন জোন গড়ে তোলার দাবি জানান। সেই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় সংশোধন এনে সিগারেট কারখানাকে পুনরায় ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত করারও আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’-এর স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান।
এমএইচএন/এমজে