বাপা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা ও খনন’ শীর্ষক আলোচনা সভা

আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় নদী রক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তার প্রশাসন কোথাও তা মানছে না। যা সরকারের নদী বিষয়ে দ্বিমুখী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তাই, দেশের নদ-নদী কেন খালে পরিণত হচ্ছে এবং সরু হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানতে চেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (৬ জুন) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা ও খনন’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চান।

আলোচনায় বাপা’র সহসভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের সব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে। জনগণের টাকায় প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অথচ দেশের মানুষকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দুর্নীতির মনোভাব নিয়ে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। দেশের নদ-নদীর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় নেই- ফলে অধিকাংশ টাকাই অপচয় হয়।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস প্রয়োজন। দেশের নদ-নদীর সমস্ত তথ্য না জেনে নদী কখনও খনন করা যাবে না।

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিয়োগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) উপদেষ্টা ড. মমিনুল হক সরকার বলেন, আমাদের দেশের নদীপাড়ের জমিগুলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদী ঘেঁষা জমির চাইতে অনেক বেশি উর্বর, ফলে এদেশের মানুষের নদীকেন্দ্রীক জীবন জীবিকা বেশি গড়ে ওঠে। তিনি দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে চাপমুক্ত এবং প্রভাবমুক্ত কর্মপরিবেশ কামনা করেন।

লকহ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয় পেলসেনভিয়ার অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, নদী খননের জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব ড্রেজিং চাই। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে তাতে শুধু দেশের জনগণের টাকার অপচয়ই হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ড্রেজার মেশিন আছে তা দিয়ে দেশের মাত্র ৪-৫ শতাংশ ড্রেজিং করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের নদী খননে ভারতের এত গরজ কেন? তিস্তা নদীকে একটি চ্যানেলে পরিণত করা হবে?

অন্যান্যরা বলেন, নদী ও পরিবেশের উন্নয়ন নিয়ে যেখানেই কাজ হচ্ছে সেখানেই দুর্নীতি। দুর্নীতিমুক্ত শাসন ব্যবস্থা গড়তে পারলে নদী, পরিবেশ ও দেশ বাঁচবে। ড্রেজিংয়ের পর সেই মাটি ও বালি নদী পাশে রাখার ফলে সেই মাটি-বালি পুনরায় নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে নদী আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দেশের টাকা শুধু অপচয় হচ্ছে। ড্রেজিং হতে হবে প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব। দেশের পোল্ডার এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রেজিংয়ের ফলে নদীতে মাটি-বালি ফেলা এবং নদীর পাড়ের কৃষকের আবাদি জমিতে মাটি-বালি ফেলার কারণে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। দেশের সম্পদ হরিলুট হচ্ছে।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, রিভারাইন পিপল পরিচালক তুহিন ওয়াদুদ, চলনবিল রক্ষা জাতীয় কমিটি আফজাল হোসেন প্রমুখ।

এমএইচএন/এইচকে