রাজধানী ঢাকা দেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শহরটির পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি বাসযোগ্যতা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। 

সোমবার (৭ জুন) ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় পরিবেশ ভাবনা’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় এ দাবি করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। ঢাকা মহানগরকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে সভায় ১৫ দফা প্রস্তাবনাও জানায় সংগঠনটি।

আলোচনায় মূল বক্তব্যে বাপার নগরায়ন ও নগর সুশাসন বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা’- ঢাকা ও তার আশপাশে ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভূমি ব্যবহার, আবাসন, পরিবহন, পানি নিষ্কাশন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন, সামাজিক ও নাগরিক সেবা ইত্যাদি প্রদানের জন্য একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা। 

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা দেশের অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শহরটির পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি বাসযোগ্যতা কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পরিকল্পনাটি এমন সময়ে প্রণীত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, নিউ আরবান এজেন্ডা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করছে। সব বিচারে এ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এস এবং আরএস রেকর্ডে যত খাল আছে তার সবগুলোই রাজউকের আওতায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রায় ৭৪ শতাংশ এলাকা মিশ্র এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুন্দর সমৃদ্ধ শহর গঠন এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ড্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাজউককে সত্যিকারের একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই। রাজউকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ছাড়া একটি পরিকল্পিত ও জনকল্যাণমুখী ড্যাপ কখনও সম্ভব হবে না। ভূমিদস্যুদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, যেকোনো সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নে বাস্তবতার চেয়ে আদর্শগত অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে হবে। সব ধরনের কাজে পরিবেশের বিষয় অগ্রগণ্য থাকা উচিত। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। 

তিনি বলেন, অকার্যকর ল্যান্ডিং স্টেশনে রাস্তা নির্মাণ কিংবা নদী-খাল-পুকুর-জলাশয় এবং প্লাবন অঞ্চলসহ অবশ্যই পুনরুদ্ধার করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে মিশ্র এলাকা বা অন্য কোনো নাম দিয়ে ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা ড্যাপ প্রণয়নে দর্শনগত ত্রুটি। প্রস্তাবিত এ ড্যাপে ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলার চেয়ে যারা পরিবেশ ধ্বংস করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতাশালী হয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা রয়েছে। একজন দখলদারকে শাস্তি  দেওয়ার পরিবর্তে তাকে অংশীজন বানিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।

বাপার নগরায়ন ও নগর সুশাসন বিষয়ক কমিটির আহবায়ক পরিকল্পনাবিদ স্থপতি সালমা এ শফির সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, পরিকল্পনাবিদ হিশামউদ্দিন চিশতী, স্থপতি জেরিন হোসেন, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক গোলাম রহমান, বাপার কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান এবং বাপার যুগ্ম সম্পাদক শারমীন মুরশিদ প্রমুখ।

এমএইচএন/আরএইচ