পা হারিয়েও মানবসেবা থেমে নেই ২০ জীবন বাঁচানো সেই পুলিশের
কৃত্রিম পা নিয়েই মানবসেবায় ছুটছেন মানবিক পুলিশ পারভেজ
‘পা ছাড়া হাঁটতে কী কষ্ট তা আমি বুঝি। এমন কাউকে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারি না। আমার তো একটাই পা। ইচ্ছা হয়, এটা দিয়ে হলেও যেন তার দুঃখ দূর করি।’
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানান বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম মানবিক সদস্য পারভেজ মিয়া। সাহসিকতার জন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার বিপিএম খেতাব পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সালের ৭ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে একটি বাস পাশের জলাশয়ে ডুবে যায়। সেসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কনস্টেবল পারভেজ। যমে মানুষে টানাটানি পরিস্থিতিতে একে একে ২০ জন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে সাহসিকতার অনন্য নজির গড়েন তিনি।
আজীবন মানুষের সেবায় ছুটে চলার ব্রত নিয়েছিলেন পারভেজ। মানুষের জন্য যার এত প্রেম, নিয়তি তাকে এক কঠিন পরীক্ষায় ফেলে। বাসডুবির ঘটনার দুই বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। মানবসেবায় সবার আগে ছুটতে চাওয়া মানুষটা হারিয়ে ফেলেন পা।
বিজ্ঞাপন
পারভেজ পা হারান। তবে প্রেম হারাননি। কৃত্রিম পা নিয়ে মানুষের সেবায় বুকটান করে এখনো আছেন তিনি জীবনযুদ্ধের ময়দানে। পারভেজ এখন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার হাইওয়ে পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারে (মেঘনা) সিসি ক্যামেরার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন। সরকারি দায়িত্বে দেশসেবা করা ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রেমে আছেন মানুষের পাশেই। আছেন সেবার ডালি নিয়ে মানবিক কাজে।
তার সহকর্মীরা জানান, রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় মানুষের সেবায় কাজ করছেন পারভেজ। পঙ্গু ও শারীরিকভাবে ভারসাম্যহীন মানুষের উপকারে আসার সাধ তার সাধ্যের চেয়ে বেশি। আশপাশে বিপদগ্রস্ত কাউকে দেখলে তিনি সবার আগে পাশে দাঁড়ান।
কনস্টেবল পারভেজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসহায় দুস্থদের মায়ের রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। ভবিষ্যতে এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে খাবার পরিবেশনের ইচ্ছা আছে। খাবার ছাড়াও জামা-কাপড়, কম্বলসহ নানা প্রয়োজনে পারভেজ বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। মানবসেবায় বাড়ানো সেই হাতকে সাপোর্ট করে শক্তি যোগায় পরিবারের সদস্য আর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী।
স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় যুদ্ধ করে। কিন্তু সুখী ও মানবিক রাষ্ট্র গড়তে হাতে হাত রাখতে হয়। এই দীক্ষা মানবিক যোদ্ধা পারভেজের আছে। কারণ, তার আরেকটি বড় পরিচয় তিনি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম তার বাবা। কৃত্রিম পা নিয়েও তিনি তাই অসহায় মানুষের সেবায় সবার আগে ছুটে যান অকৃত্রিম প্রেমে।
আর/এইচকে/জেএস