পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সরকারদলীয় কর্মীদের মহড়া সরকারি ঠিকাদারি ও নির্মাণকাজে অবৈধ ‘পেশিশক্তি ব্যবহারের নগ্ন প্রকাশ’ বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

একইসঙ্গে এ ঘটনাকে দেশের সরকারি ক্রয় ও নির্মাণকাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত অবৈধ বলপ্রয়োগ, ভয়-ভীতির মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়া এবং অস্ত্রের মুখে প্রতিযোগিতামূলক কাজবণ্টন প্রভাবিত করার আরেকটি প্রকাশ্য উদাহরণ বলে মনে করে সংস্থাটি।

রোববার (১৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি ক্রয়, নির্মাণকাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিযোগিতামূলক যে টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধ বলপ্রয়োগ, হুমকি-ধমকি এবং জবরদখলে দীর্ঘ দিন ধরেই তা অকার্যকর হয়ে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট নানা কর্তৃপক্ষ ছোটখাটো কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বরাবরই তা অস্বীকার, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করে আসছে। পাবনার ঘটনা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পেশিশক্তি ব্যবহারের ভয়াবহ সেই রেওয়াজের আরেকটি নজির মাত্র। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. জামান আরও বলেন, যদি অস্ত্রগুলো বৈধ হয়েও থাকে, তবুও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরে জনসম্মুখে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভীতি তৈরি করা আইনসিদ্ধ হতে পারে না। তাই এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলাটা অত্যুক্তি হবে না। এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ‘অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে’ পুলিশের এমন দায়সারা আশ্বাস আমাদের স্তম্ভিত করেছে। এই অস্ত্র মহড়ার কুশীলবরা ছাড় পেয়ে গেলে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিষাক্ত সাপের মতো সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে।

২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর টিআইবির প্রকাশিত ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন : বাংলাদেশে ই-জিপির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, সরকারি টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট ২০১১ সালে ই-জিপি পোর্টাল চালু করে। এর ফলে ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হলেও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেট এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। ভয়-ভীতি, যোগসাজশ কিংবা অবৈধ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার চর্চা বিদ্যমান আছে। যার প্রমাণ পাবনার এ অস্ত্র মহড়া ও পেশিশক্তি প্রদর্শন। অবিলম্বে এই ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রতিশ্রুতি শুধু মৌখিক চটক হিসেবেই প্রমাণিত হবে।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন দুপুর ১২টার দিকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন ওরফে হাজী ফারুক সহযোগীদের নিয়ে গণপূর্ত ভবনে ঢুকেন। তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালুকে দেখা যায়। অস্ত্র নিয়েই কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে তাদের। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান। ভিডিও ফুটেজ দেখে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

আরএম/এসকেডি