নিরবিচ্ছিন্ন জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে পায়রা বন্দর চ্যানেলে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং চালু রয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আরও বড় জাহাজ ভিড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডে নুল’ এর সঙ্গে একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

রোববার (১৩ জুন) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং’ এর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃতে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বন্দরটিতে জাহাজ চলাচলের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর এই জাহাজগুলো থেকে সরকার প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে। বর্তমানে এ চ্যানেলের গভীরতা ৬.৩ মিটার বজায় রাখা হচ্ছে।

আরও জানানো হয়, রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের গভীরতা ১০.৫ মিটারে উন্নীত করা হবে। ফলে বন্দরে ৪০ হাজার টনের কার্গোবাহী এবং ৩ হাজার টিইইউ বিশিষ্ট জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে। এজন্যই দেশের প্রচলিত যাবতীয় বিধিবিধান প্রতিপালন করে ড্রেজিং কাজটি সম্পাদনে বিশ্বখ্যাত বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডে নুল’ এর সঙ্গে চুক্তি সই করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পায়রা কর্তৃপক্ষ জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে ড্রেজিং কাজটি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ব্যয় কমেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ তৈরি করেছেন এবং চলতি বছরের ১৫ মার্চ তহবিলটির উদ্বোধন করেছেন। এই তহবিলের প্রথম গ্রাহক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দরকে বেছে নিয়েছেন এবং ড্রেজিং কাজটি এই তহবিল থেকে অর্থায়নের অনুমোদন করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ড্রেজিং কাজটি সম্পাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় প্রায় ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, ড্রেজিং কাজ শেষ হলে এবং আন্দারমানিক নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দর থেকে রাজধানীসহ দেশের সব স্থানে দ্রুত সময়ে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানেও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে আমদানি-রফতানি পণ্যের পরিবহন ব্যয় কমে আসবে, শিল্পকারখানার কাঁচামালের দাম কমবে। যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতিসঞ্চার করবে। পাশাপাশি এই বন্দরকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক অবকাঠামো ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠা, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং নগরায়ণ হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

এসআর/এসকেডি