ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি নিজেই এমন অভিযোগ করেন। রোববার (১৩ জুন) নিজ ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানান। এর দুই ঘণ্টা পর বনানীর নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেন পরীমণি।

তিনি বলেন, উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) নামে একজন নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে যান নায়িকা। সেদিন চার মদ্যপ ব্যক্তি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টাও করেন।

পরীমণি বলেন, ‘আমি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করার মতো মেয়ে না। আমি যদি মরে যাই, আপনারা (সাংবাদিক) বুঝবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারি না। আমি সুইসাইড করব না। আমি আমার বিচার নিয়ে মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, বিচার চাই। আমি আজকে মরে গেলে... আমি সুইসাইড করি নাই, সবাই জেনে রাখেন। আর আমাকে যদি কেউ মারে, আমি যদি মরে যাই; ভাইয়ারা আপনারা বিচার কইরেন, আল্লাহর কসম।’

সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি আরও যা বলেন

‘চার দিন ধরে একদম সাধারণ মেয়ের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। পরীমণি হিসেবে যখন স্ট্যাটাসটা দিলাম তখনই সবাই (সাংবাদিকরা) আসলেন’— এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও আক্ষেপের কথা জানালেন সদা হাস্যোজ্জ্বল পরীমণি।

আমি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করার মতো মেয়ে না। আমি যদি মরে যাই, আপনারা (সাংবাদিক) বুঝবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারি না। আমি সুইসাইড করব না। আমি আমার বিচার নিয়ে মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, বিচার চাই। আমি আজকে মরে গেলে... আমি সুইসাইড করি নাই, সবাই জেনে রাখেন। আর আমাকে যদি কেউ মারে, আমি যদি মরে যাই; ভাইয়ারা আপনারা বিচার কইরেন, আল্লাহর কসম

বনানীর নিজ বাসায় রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এ নায়িকা। তিনি বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।’

পরীমণি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?

কী ঘটেছিল সেটা জানতে চাই, আপনি নির্ভয়ে বলুন— উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পরীমণি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন।’

পরীমণি আরও বলেন, ‘সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’

তিনি বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন।

‘নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) উপস্থিত সাত/আটজন আমাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। আমাকে আটকে ফেলে। জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। জিমিকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।’

নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ) তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি।

‘ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে যাই’ উল্লেখ করে পরীমনি বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অভিযোগ রেকর্ড করেননি। বরং সকালে এসে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।’ এ সময় পুলিশের সাহায্যে হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বলে উল্লেখ করেন পরীমণি।

আমি ভাই বলতে পারছি না। ভাই, আমার বলতে ইচ্ছা করছে না। আপনারা পাঁচটা মিনিট কান্না দেখতেছেন (সাংবাদিকদের উদ্দেশে), আমি চার দিন… আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, আমি সুস্থ নই, আমি না ভাইয়া পাগল হয়ে গেছি... পাগল। আমার জায়গায় থাকলে আপনারা কেউ এখানে বসে কথা বলতে পারতেন না।

সেভ মি, আমি এভাবে মরতে চাই না : পরীমণি

রাতে বনানীর নিজ বাসায় ডাকা সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন। তাকে হেনস্তাকারী ব্যক্তির পরিচয় এবং তিনি (পরীমণি) কী চান— ঘুরেফিরে এ প্রশ্নই সামনে চলে আসে। এ সময় সারাক্ষণ তাকে কান্না করতে দেখা যায়।

পরীমণি বলেন, আমি ভাই বলতে পারছি না। ভাই, আমার বলতে ইচ্ছা করছে না। আপনারা পাঁচটা মিনিট কান্না দেখতেছেন (সাংবাদিকদের উদ্দেশে), আমি চার দিন… আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, আমি সুস্থ নই, আমি না ভাইয়া পাগল হয়ে গেছি... পাগল। আমার জায়গায় থাকলে আপনারা কেউ এখানে বসে কথা বলতে পারতেন না।

>> নাম কী, ফেসবুকে কী নাম তার... বুড়া লোকটার...

নাসির উদ্দিন আহমেদ। সে ঘুরে এসে প্রথমে আমারে দুটা থাপ্পড় মারছে। আমি তো এমনিতে কোনো কথা বলতে পারছিলাম না, জিমিকে দেখে চুপ করে আছি... ওয়েটার যারা ছিল, লাইট অফ করে দিতে বলছে, লাইট অফ করে দিছে। তারপর টিভির মনিটর ছিল...। আর একটা লোক ছিল শার্টটা এভাবে খুলে, বোতাম-টোতাম সরে গেছে... তারপর জিমির গলায় এভাবে প্যাঁচায় দিছে শার্টটা। প্যাঁচায় দিয়ে বলে কী মাধুরি দীক্ষিতের গানে এখন নাচবি তুই। আমি এই হরিবল (ভয়াবহ) দৃশ্য ভুলতে পারছি না। এরম-ওরম করতেছিল, আমার চোখের সামনে ভাসতেছে। 

আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, সেভ মি। আমি মরতে চাই না এভাবে।

>> ওখান থেকে আপনি বের হয়েছেন কখন...

আমি জানি না। যখন আমাকে এতগুলো... আমার গলা এখান থেকে এখান থেকে পুরো জ্বলে যাচ্ছিল... আমি তো জানি ভাইয়া আমি ওই সময় মরে যাব। আমি সত্যি জানি না, এখন আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে পারব। আমি সত্যি জানি না। আমি জানতাম আমি মরে গেছি, একটু পর মরে যাব। 

>> ওই লোকটার বয়স কত হতে পারে... আনুমানিক...

খুঁজে দেখেন না। আমি জানি না। আমায় যখন খাওয়ায় দিছে আমি তখন ওইখানে বমি করছি। আমি নাকি সেন্সলেস হয়ে গেছিলাম। আমার অক্সিজেনের... প্রবলেম আছে, সবাই জানে। আমার বাসায় তিনটা সিলিন্ডার থাকে অনেক আগে থেকে, সাড়ে তিন বছর চার বছর হয়ে গেছে। আমি যখন নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম ওয়েটাররা আমাকে ধরে আমাকে নামাইছে... পুরো বিষয়টা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড আছে। আমি যাওয়ার সময় দেখেছি সেখানে ক্যামেরা আছে। সেখানে সিকিউরিটি অনেক কড়া। 

>> নাসির উদ্দিন ওই ক্লাবের কিছু হয় কি না...

উনি বলছে, আমি এখানকার প্রেসিডেন্ট। আমি শব্দগুলো বলতে পারছি না ভাইয়া। অকথ্য ভাষায় কী জানি বলছে... তোর এখানে এই করব, সেই করব, দেখি কে তোকে...

>> অমির ভূমিকাটা কী ছিল...

সে প্রথমে চুপ থাকছে, নট ট্রাই। তখর আমার মনে হইছে, এটা একটা প্লানিং ছিল। আনসার্টেন প্লানিং, হঠাৎ করে প্লানিং হয়ে যায় না...  

>> পরি তুমি কখন ওখান থেকে ফিরছ, সময়টা মনে আছে কি না...

আমি যখন ফিরছি, তখন দেখি আমার গাড়ির গ্লাস সব খোলা। উপরের হুড খোলা। আমি দেখতে ছিলাম আমার কাপড় ঠিক আছে কি না। জিমি বলছিল, মায়ের কসম আপি তুমি ঠিক আছ। আমি ৯৯৯ এ কল দিছিলাম। আমি বলেছি, উত্তর থানা নাকি দক্ষিণ থানা আমি জানি না ভাই, এটার নাম হচ্ছে বোট ক্লাব, তখন ওই লোকটার সাথে আরও দুই-তিনজন ছিল ওরা বের হয়ে যায়। এটুকু মনে আছে, পরে আর কিছু মনে নাই।

>> বাকি দু-তিনজনকে চেনেন আপনি, নামগুলো জানেন কি না...

আমি চিনি না, জানতামও না। এখন জানি। বের করেছি।

>> কোনো ছবি বা গ্রুপ ছবি আছে...

না গ্রুপ ছবি নাই। কারণ তারা আমার ফ্রেন্ড না, তাদের সাথে কীভাবে আমি ছবি তুলি, আপনি হলে তুলতেন?

>> আনুমানিক তখন সময়টা কত হতে পারে...

আমারে দুই ঘণ্টা-আড়াই ঘণ্টা আটকে রাখছে...

>> তার মানে তখন দুইটা-আড়াইটা বাজে...

আর একটু বেশি হবে...

>> যেহেতু আপনাকে জোরপূর্বক ড্রিংকস করানো হয়েছে। আপনি কি ব্যালান্স (ভারসাম্য) নিয়ে নামতে পারছিলেন...

আমাকে নামানো হইছে ভাই, আমি তখন সেন্সলেস ছিলাম। আমি যখন ৯৯৯ কল দিতেছিলাম তখন ওরা বলাবলি করছিল কী হয়ে গেল...দুই-একজন লোক এসে মাফও চাইতেছে... আমার এটুকু মনে আছে।

এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়

হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে : ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরীমণি

এর আগে রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এ দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’

পরীমণি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’

ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টায় যাদের অভিযুক্ত করলেন পরীমণি

পুরো ঘটনার জন্য দুজনকে দায়ী করেছেন পরীমণি। তাদের একজন রাজধানীর উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাছির ইউ মাহমুদ, অন্যজন পরীর কস্টিউম ডিজাইনার জিমির স্কুলবন্ধু অমি নামের এক ব্যবসায়ী।

আর একটা লোক ছিল শার্টটা এভাবে খুলে, বোতাম-টোতাম সরে গেছে... তারপর জিমির গলায় এভাবে প্যাঁচায় দিছে শার্টটা। প্যাঁচায় দিয়ে বলে কী মাধুরি দীক্ষিতের গানে এখন নাচবি তুই। আমি এই হরিবল (ভয়াবহ) দৃশ্য ভুলতে পারছি না। এরম-ওরম করতেছিল, আমার চোখের সামনে ভাসতেছে। আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, সেভ মি। আমি মরতে চাই না এভাবে

পরীমণি জানান, গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় নতুন একটি প্রজেক্টের মিটিংয়ের কথা বলে তাকে বিরুলিয়ায় অবস্থিত বোট ক্লাবে নিয়ে যান অমি। পরী সেখানে গিয়ে দেখেন নাসির ইউ মাহমুদসহ চার-পাঁচজন টেবিলে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে পরীমণিকে পরিচয় করিয়ে দেন অমি। পরীকে নাসির ইউ মাহমুদ মদপানের প্রস্তাব দিলে পরী সেটি নাকচ করেন। এরপর তাকে কফি খেতে দেওয়া হয়। কফির কাপে তিনি চুমুক দিলেও স্বাদ খানিকটা অস্বাভাবিক মনে হয়। তাই তিনি আর কফি পান করেননি।

পরী জানান, টেবিলে থাকা ঠাণ্ডা পানীয়তেও তিনি মুখ দেননি। বিপরীতে বারবার এগুলো পান করার জন্য জোর করছিলেন নাসির ইউ মাহমুদ। সেটি না শোনায় পরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। এরপর টেবিল থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। বাসায় যেতে চাইলেও যেতে দেওয়া হয়নি।

পরীমণি বলেন, ‘নাসির ইউ মাহমুদ আমাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। মুখের ভেতর জোর করে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। এতে দাঁতে আঘাত লাগে এবং কিছু মদ গলায় যায়। গলা ও বুক জ্বলতে থাকে। আমি তখনই খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে থাকা জিমি তখন চিৎকার ও কান্না শুরু করলে আমাদের ধর্ষণের হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন নাসির ইউ মাহমুদ।’

পরী জানান, সেখানে অনেকক্ষণ ধরে অচেতন অবস্থায় ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কী ঘটেছিল তাও তিনি জানেন না। কীভাবে তিনি সেখান থেকে এসেছেন তাও তার জানা নেই। একপর্যায়ে নিজেকে তার গাড়িতে দেখতে পান বলেও জানান। পরী বলেন, ‘এ সময় আমার কাপড় ভেজা ও ফাটা ছিল।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার বেশির ভাগ সময় জুড়ে পরীমণির চোখে ছিল জল। তিনি বারবার বলছিলেন, তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। বাসায় থেকে পাহারা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধও করেন জনপ্রিয় এ নায়িকা।

নাসির ইউ মাহমুদ আমাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। মুখের ভেতর জোর করে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। এতে দাঁতে আঘাত লাগে এবং কিছু মদ গলায় যায়। গলা ও বুক জ্বলতে থাকে। আমি তখনই খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে থাকা জিমি তখন চিৎকার ও কান্না শুরু করলে আমাদের ধর্ষণের হুমকি এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন নাসির ইউ মাহমুদ

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার আকুতি ছিল এমন- ‘আপনারা পাঁচ মিনিট কেমনে দেখতেছেন, আমি চার দিন ধরে… আমি পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া। আমি সুস্থ নাই মানসিকভাবে। আমি না পাগল হয়ে গেছি ভাইয়া, আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার জায়গায় থাকলে আপনারা কেউ কথা বলতে পারতেন না।’

পরীমণি জানান, ঘটনার সময় নাছির ইউ মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে জানা গেছে, সভাপতি নন, নাসির ইউ মাহমুদ বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি পদে আছেন।

কে এই নাছির ইউ মাহমুদ

নাছির ইউ মাহমুদের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি কুঞ্জ ডেভেলপারসের চেয়ারম্যান (বর্তমান), উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সাবেক জেলা চেয়ারম্যান, ঢাকা প্রথম বিভাগে খেলা একজন সাবেক ফুটবলার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি একজন প্রভাবশালী শিল্পপতি।

মধ্যরাতে থানায় ‘বেসামাল অবস্থায়’ আসেন পরীমণি : পুলিশ

ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি এমনও অভিযোগ করেন যে, সহযোগিতার জন্য বনানী থানায় গেলে তাকে সহযোগিতা করেনি পুলিশ। রোববার (১৩ জুন) রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন পরীমণি।

তবে পরীমণির এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাত সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে তিনি বনানী থানায় এসেছিলেন। ওই সময় তিনি বেসামাল ছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় কারও অভিযোগ নেওয়া যায় না।’

ওসি আরও বলেন, ‘সেদিন মধ্যরাতে থানার দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার আমাকে জানান, পরীমণি মদ্যপ অবস্থায় বলেছিলেন যে তাকে জোর করে মদ খাওয়ানো হয়েছে। তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছে। তবে পরীমণি ভারসাম্য অবস্থায় ছিলেন না। তাই ডিউটি অফিসার তাকে প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেন। চিকিৎসার পর অভিযোগ শোনার আশ্বাস দেন।’

এরপর পুলিশের একটি দল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে (অ্যাপোলো হাসপাতাল) নিয়ে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে পরীমণি আর অভিযোগ করেননি।’

ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, ‘বেসামাল অবস্থায় অভিযোগ নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা রোববার রাত পর্যন্ত তাকে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তিনি মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দেননি।’

তবে পরীমণি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশ তার মোবাইল নম্বর এবং তার দীপু মামার মোবাইল নম্বর রেখেছিল। তারাই যোগাযোগ করবে বলে বলেছিল। কিন্তু কোনো যোগাযোগ করেনি তারা।

এদিকে, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বিচার চাওয়ার বিষয়ে পরীমণি ফেসবুক স্ট্যাটাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের উদ্দেশে লেখেন, “থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না, মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনাটি বিস্তারিত জেনে ‘দেখছি’ বলে চুপ হয়ে যায়।”

পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আইজিপি স্যারের সঙ্গে তিনি (পরীমণি) কখনওই কথা বলেননি। আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। আইজিপি স্যার এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। স্যারের নাম অহেতুক ম্যানশন করা হয়েছে।’

পরীমণির অভিযোগের বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ

পরীমণির ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক এআইজি সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরীমণির ফেসবুক স্ট্যাটাস পুলিশ সদর দফতরের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরীমণির অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তিনি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।’

অভিযোগের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে পরীমণি বলেন, ‘যা বলেছি সত্য বলেছি। আমি এর বিচার চাই। ১০ জুন থেকে আমি ট্রমার মধ্যে আছি। ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করছি, পারছি না। চেষ্টা করেছি বিচার পাওয়ার জন্য। কিন্তু সবখানে নীরবতা। বিচারের আশ্বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে এ পোস্ট দিয়েছি।’

আরআইজে/এমআরএম/জেইউ/এআর/ওএফ/এমএআর