দেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। নিজের ফেসবুক পেজে এমন অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার পর পরীমণির ভক্তসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরে সঠিক বিচার দাবি করেছেন। রোববার (১৩ জুন) নিজ ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানান পরীমণি। এর দুই ঘণ্টা পর বনানীর নিজ বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও কলাম লেখক শরিফুজ্জামান শরিফ ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, চিত্র নায়িকা পরীমণির অভিযোগটা শুনলাম। এই ঘটনার সঙ্গে যার নাম এসেছে তিনি খুব প্রভাবশালী৷ আমি জানি তার জন্য এই ঘটনার কোনো বিচার হবে না৷ এই সরকারের সময়ে প্রভাবশালী কেউ অপরাধ করলে সরকার তার বিচার করে না। এদের পাষণ্ডতার উৎস এই শাসন ব্যবস্থাকে ঘৃণা করলেও এই ঘটনার বিচার চাইছি না। তবে যদি মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে এর বিচার চায় তখন তাদের সঙ্গে থাকব।

নায়িকা পরীমণির আয়সহ নানা বিষয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে নাজনীন মুন্নি নামে এক জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মী লিখেছেন, আপনাদের একটা কথা বলি শুনেন। পরীমণি কি, কেমন করে তার চার্টার্ড প্লেনের টাকা যোগাড় হয় বা কেমন করে সে দুবাই এ বিলাসী অবসর কাটায়। এইগুলা আপনার অপ্রাপ্তি আর হিংসুক মনের প্রশ্ন।

একজন প্রথম সারির নায়িকা রাত ১২টা কেন, যেকোনো সময় পারিবারিক বন্ধুর সঙ্গে যে কোথাও যেতে পারেন। এইটা তার স্বাধীনতা। এই দেশে রাত ৮টা বাজলে দোকানের ঝাঁপি বন্ধ করে ঘরে বসে যেতে হবে- এই নিয়ম আপনার জন্য প্রযোজ্য, কারণ আপনি চান। কিন্তু কেউ যদি চায় সে ঘুরবে। আনন্দ করবে সেটা তার স্বাধীনতা।

ঘরে বন্দি অবস্থায় আপনি যদি নিজেকে নিরাপদ ভাবেন আপনার মতো বোকা নাই। আপনি বাইরে যখন কোনো শঙ্কা ছাড়া চলতে পারবেন তখন আপনি নিরাপদ এইটুক বুঝ নাই আপনার?। আমি নায়িকা বা আমি মিডিয়ায় কাজ করি বলেই নোংরা মনের নোংরা মানুষ আমার গায়ে হাত দিতে পারবে বা টাকার জোরে আমাকে কাবু করবে এমন ভাবা অসভ্যতা। এমন মানসিকতা যখন আপনার থাকবে, আপনি বুঝবেন আপনি লম্পট। দুশ্চরিত্র একজন। মনে রাখেন একজন প্রস্টিটিউটেরও না বলার অধিকার আছে। সেখানে পরী একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। না মানে না, ব্যস। এই ঘটনার তদন্ত হতে হবে। পরীমণি ভুল হলে তার শাস্তি হবে, কিন্তু আর চেপে যাইয়েন না।

এই দেশটা টাকা আর কিছু বিকৃত মানুষের পায়ের কাছে পড়ে আছে। মনে অবশ্যই রাখেন আপনারও একটা মেয়ে বা বোন আছে। এই দেশের নায়িকার যখন এমন হাহাকার করে কেঁদে আকুল হয়ে বিচার চাইতে হয়, আপনি কই আছেন আর আমি কই।

গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ নামের একজন জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মী নাসির ইউ মাহমুদ নামের অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চৌদ্দ শিকের ভেতরে দেখতে চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

পরীমণি একজন মানুষ এবং নারী! উল্লেখ করে জান্নাতুল ফেরদৌস নেহা জেনি নামের একজন লিখেছেন, তার অভিযোগের জায়গা আছে। ঘটনার আকস্মিকতা তুলে ধরে সে বিচার চাইতেই পারে।

এখন শুধুমাত্র সে চলচ্চিত্রে কাজ করে দেখে তার সঙ্গে যা খুশি তাই করা যাবে? সে সেটার বিচার চাইবে না? পরীমণির সঙ্গে যা ঘটেছে তা যদি সাধারণ কারও সঙ্গে ঘটত তখন আপনারা ঠিকই দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের স্ট্যাটাসে ধুয়ে দিতেন আর বলতেন Justice for Pori moni

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ভিকটিম না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝবেন না একজন ভিকটিমের অসহায়ত্ব। আপনাদের এখানে মজা নেওয়ার কি যৌক্তিকতা তা বুঝে আসে না। আগেই জাজ করবেন না।

আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা নাম হলো পরীমণি উল্লেখ করে মোছা. করিমা আকতার লিখেছেন পরীমণি আপুর সঙ্গে যে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করেছে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হোক। তা না হলে আমাদের পরীমণি ভক্তদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও তোমার সঙ্গে অসভ্যতামি করার ন্যায্য বিচার আমরা পাইয়ে দেব।

ফেসবুকের হোমপেজে প্রবেশ করলেই এমন নানা মত আজ চোখে পড়ছে। অধিকাংশ মানুষই ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

একে/এসএসএইচ