ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের কারণে তার গ্রহণ করা বিভিন্ন উদ্যোগ নিষ্ফল হয়েছে।   

সোমবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, দেশে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। সরকার বলছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সরকার ও বিরোধী দলে থাকবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্পেস না দিলে সেটা কীভাবে সম্ভব? সামনে ইউপি নির্বাচন, সেখান থেকে আবারও নিরপেক্ষ নির্বাচন শুরু হোক।

রাশেদ খান মেনন বলেন, করোনাকালে আমাদের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামোগত যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে সেটা এখানে উল্লেখ করতে চাই। কোভিড ১৯-এর অভিজ্ঞতা বিশ্বে নতুন। কিন্তু এতে বিমূঢ় না হয়ে প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা রক্ষায় প্রথমেই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশে অতিধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের পাকচক্রে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিষ্ফল হয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক খবরদারিত্বে বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। করোনা রোধে স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ নয়, আমলাতান্ত্রিক নির্দেশে পরিচালিত হওয়ায় কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল তাও আমরা দেখেছি। 

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, একজন শাহেদ, একজন সাবরিনা গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু যারা সচিত্র চুক্তি স্বাক্ষর করল, কাজ দিল তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওই মাস্ক-পিপিই জালকারী প্রতিষ্ঠান এখনও স্বাস্থ্য খাতের সর্ববৃহৎ সরবরাহকারী।

তিনি বলেন, ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রফতানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডোজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের ওপর নির্ভরতা, ওই স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেওয়া হয়নি। ফলে এখন সমস্ত টিকা কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে। আগামী মাসগুলোয় টিকা আসবে এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার আশ্বাস সম্পর্কে সরাসরি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। 

তিনি বলেন, আমি এবার রাজনীতি প্রসঙ্গে দুই একটি কথা বলতে চাই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা হেফাজতের তাণ্ডব দেখেছি, দেখেছি কীভাবে তারা কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে একটা অভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছিল। তারা যে বিএনপির সমর্থন পেয়েছিল এটা এখন দলের মহাসচিবের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ওটা হেফাজতের তাণ্ডব ছিল না, সরকারের তাণ্ডব ছিল। সরকার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করছে।

মেনন বলেন, এই সংসদে আমি কওমি মাদরাসাকে শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলাম, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা ‘বিষবৃক্ষ’ লালন করছি কি না। তার প্রতিক্রিয়ায় হেফাজত মিছিল করে আমার ফাঁসি চেয়েছিল।

মেনন বলেন, এই সংসদে জাতীয় পার্টির একজন এমপি ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গেয়েছি বলে উপহাস করেছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের সমর্থনে তাদের ভারতের দেওবন্দের অনুসারী বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে বাবুনগরী পাকিস্তানি মাদরাসার ছাত্র।

‘কোয়াড’ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্পর্কে মেনন বলেন, মার্কিন অথবা অন্য কারও নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান আমাদের সংবিধান সমর্থন করে না। যেটা হবে সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ। আর যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তার শত্রুর প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিষয়টি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এটা প্যালেস্টাইন সম্পর্কে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু আমল থেকে অনুসৃত নীতির বিপরীত। ভুল বার্তা দেয়। পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেই ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে।

মেনন বলেন, সকালে পত্রিকায় একটি বিষয় পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ায় নারী কর্মকর্তাদের না রাখতে বলেছেন। এটা নাকি ধর্মবিরোধী কাজ। জানাজায় নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে না বলে ফতোয়াও দিয়েছে। প্রথমত, গার্ড অব অনার, আর জানাজা এক নয়। একটি ধর্মীয় বিধি, আরেকটি সরকারি রীতি এ ধরনের সুপারিশ কেবল দুঃখজনকই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এখানে শুধু বাধা অতিধনী, সামরিক-বেসামরিক আমলা গোষ্ঠীর নেক্সাস বা অশুভ চক্র। তাকে ভেদ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব এগিয়ে যাবে দেশ এ শুভ কামনা।

এইউএ/এসকেডি