চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দুই পাশের পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন করা ৩৭০টি ঘর উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। 

সোমবার (১৪ জুন) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৩০০ জনবল ও ৩টি এক্সকেভেটর দিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে এ অভিযান পরিচলনা করা হয়। অভিযানে মহানগর অংশে ১১০টি, সীতাকুণ্ড অংশে ৭০টি  এবং হাটহাজারী অংশে ১৯০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা অধিকাংশ স্থাপনা টিনের তৈরি ঘর। কিছু সেমিপাকা এবং পাকা সীমানা দেয়াল উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩টি দলে ভাগ হয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন।

এদিকে অভিযান চলাকালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ি সন্দ্বীপে ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে সব কিছু হারিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পাহাড়ে বসবাস করতে হয়। যা আয় করি তা দিয়ে আটজনের সংসার চালিয়ে অন্য জায়গায় বাস করা সম্ভব নয়। সরকার যদি অন্য কোথাও আশ্রয় করে দিত সেখানে চলে যেতাম।প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব আমাদের বসবাসের স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিন।

এ সময় জামিলা খাতুন বলেন, অসহায় হয়েই এখানে বসবাস করছি। আজকে ঘরটা ভেঙে দিয়েছে। এখন কোথায় থাকব জানি না। সরকার যদি কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয় সেখানে চলে যাব।

অভিযানে অংশ নেওয়া পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী বলেন, পাহাড়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যাতে বর্ষা মৌসুমে কোনো ধরনের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। আর পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এখানে পাহাড়ে যত স্থাপনা আছে তা পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে। যারা অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি।

এগুলোর বাইরেও সিডিএর বায়েজিদ–ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের সময় নতুন করে ১৬টি পাহাড় কাটা হয়। সেখানকার আট পাহাড়ে নতুন করে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। এসবের মধ্যে আজ (সোমবার) প্রথম দিনের অভিযানে বায়েজিদ লিংক রোডে অবৈধভাবে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। আর ২০১৭ সালে মারা যান ৩০ জন।

কেএম/এসকেডি