নিজেদেরই ভ্যাট নিবন্ধন নেই। তারপরও ভুয়া চালানে ক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত ভ্যাট নিয়েছে টেপটেলস নামে অভিজাত রেস্টুরেন্ট। টানা ৫ মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ভ্যাট আদায় করলেও তা জমা হয়নি সরকারের কোষাগারে।

ভ্যাট ফাঁকির এমন অভিনব তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এরই মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়করা ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আজ (১৬ জুন) ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। আত্মসাৎকরা ভ্যাট আদায় এবং এ সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানা আরোপ করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বনানী এলাকার টেপটেলস নামে অভিজাত রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে আসছিল। ভুয়া চালানে নির্ধারিত ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগার জমা করেনি। পাঁচ মাসে আত্মসাৎ করেছে ৩৫ লাখ টাকার ভ্যাট। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের একটি অভিযানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পজ মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন ৬.৩ চালান দেওয়ায় ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে ১৫ জুন সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া ৬.৩ চালান ইস্যু করার মাধ্যমে যথারীতি ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দার দল রেস্টেুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।

তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিটি খাবারের বিলে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্লাইড হিসেবে উল্লেখ করা আছে, তবে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে এমন আবেদন পাওয়া যায়নি। রেস্টুরেন্টটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ছাড়া গত ৫ মাস ধরে ব্যবসা করে আসছে এবং নিবন্ধন ছাড়া ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট কর্তন করছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমাও করছে না।

প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব্দকরা তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭ টাকা। যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৫ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য।

টেপটেলস রেস্টুরেন্টের জিএম মো. আনিস এ বিষয়ে জানায়, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনও কাগজপত্র সংগ্রহ করছে।

যদিও ভ্যাট নিবন্ধন না থাকার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্তে উদ্ঘাটিত এ অপরাধ সংঘটন নিষ্পত্তির জন্য মামলার প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।

আরএম/এসএম