সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আমাদেরই আপনজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে সঠিক মর্যাদা, সেবা ও পরিচর্যা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইকো সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পৃক্তকরণ এখন সময়ের দাবি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ৩৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে আত্মসর্গকারী এবং সব শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী কালীন সরকারে এসে এই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর দুর্বল কাঠামোগত পরিবর্তন করে অসচ্ছল, অসহায় মানুষের দোরগোড়ায় আমাদের সেবা পৌঁছে দিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সারাদেশে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত আমরা ৩৮ লক্ষ ৩৫ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ১২টি ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে আমাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ বা সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং তাদের মাঝে ' সুবর্ণ নাগরিক' কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ডাটাবেজের ভিত্তিতেই আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা ৩৪ লক্ষ ৫১ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা প্রদান করছি। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এবং ঝরে পড়া রোধে আমরা চলতি অর্থবছরে ৮১ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছি।
তিনা আরো বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কেবল আর্থিক সহায় নয় তাদের স্বাবলম্বী ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সমাজসেবা অধিদপ্তর সারাদেশে বিস্তৃত পরিসরে বিশেষায়িত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজকের এই দিনে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থেরাপি সেবা সহায়ক উপকরণ বিতরণ এবং বিশেষ করে আজকের এই তিন দিনব্যাপী 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলা'র আয়োজন করেছে।
উপদেষ্টা বলেন, এই মেলার মাধ্যমে তাদের তৈরি পণ্য ও প্রতিভা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই কেবল সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। 'অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ' গড়তে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, অফিস- আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা, বিত্তবান ব্যক্তি এবং সমাজের সবাইকে এ মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরে তিনি বিভিন্ন কাজের অবদানে ২০ জন পুরস্কার প্রাপ্ত সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করেন এমন ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠান, প্রতিবন্ধীদের সফল পিতা-মাতা, সফল কেয়ারগিভারকে নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও একটি সনদ প্রদান করেন। এরপর তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার।
এসএইচআর/বিআরইউ