অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরাশাদুর রউফ

পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে যাচ্ছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। এই সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ভিআইপি কক্ষ, সরকারি গাড়ি, পুলিশ প্রটেকশন ও পূর্ণ প্রটোকল সুবিধা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এ ধরনের ভিআইপি প্রটোকলের আওতাভুক্ত নন। নিয়মের বাইরে গিয়ে এসব সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের আলোচনা চলছে।

প্রাপ্ত চিঠি অনুযায়ী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ পরিবারে নিয়ে বুধবার ২৪ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তিনি রাত সাড়ে ৮টার একটি ফ্লাইটযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে পৌঁছাবেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় তিনি ঢাকার গুলশান এলাকার বাসা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। চট্টগ্রামে অবতরণের পর রাত ৯ টা ২৫ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম জেলা সার্কিট হাউজে গমন করে সেখানে রাত্রিযাপন করবেন।

সফরসূচিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম অবস্থান শেষে আগামী শুক্রবার ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। এরপর ৯ টা ৫৫ মিনিটের একটি ফ্লাইটযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।

চিঠিতে যোগাযোগের সুবিধার্থে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি মোবাইল নম্বরও উল্লেখ করা হয়।

এই সফরসূচির পাশাপাশি চিঠিতে স্পষ্টভাবে উভয় বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের ব্যবস্থা, চট্টগ্রাম জেলা সার্কিট হাউসে দুইটি ভিআইপি কক্ষ বরাদ্দ, প্রয়োজনীয় পুলিশ প্রটেকশন ও প্রটোকল সুবিধা এবং সরকারি গাড়ি বরাদ্দ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিটি পাঠানো হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের কাছে।

তবে চট্টগ্রামের প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ভিআইপি প্রোটোকলের তালিকাভুক্ত নন। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তাকে ভিআইপি লাউঞ্জ, সার্কিট হাউজের ভিআইপি কক্ষ কিংবা সরকারি প্রটোকল দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও তিনি অফিসিয়ালি চিঠি পাঠিয়ে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দাবি করেছেন।

তিনি আরও জানান, বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে প্রটোকল লাগলে হলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এই সফরের ক্ষেত্রে এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সম্মান অবশ্যই প্রাপ্য, তবে তা নির্ধারিত নিয়ম ও কাঠামোর মধ্যেই হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এ ধরনের প্রোটোকল পায়। আমাদের র‍্যাংক হচ্ছে সিনিয়র সচিব অথবা সচির সমমানের। ঢাকায়ও আমরা এ ধরনের প্রোটোকল পাই। এর আগেও আমি চট্টগ্রাম গিয়েছি এবং এ ধরনের প্রোটোকল পেয়েছি৷ আর চিঠিটি যেটির কথা বলছেন সেটি আমার অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে। আমি তাদেরকে ট্রাভেল প্ল্যান দিয়েছি, তারা নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সাতটি হত্যা মামলায় সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ও গত ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন একে একে এসব মামলায় জামিন পান তিনি। এমন একজন দুর্ধর্ষ আসামির জামিন ঠেকাতে রাষ্ট্রপক্ষ সাধারণত আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ভয়ংকর এই আসামিকে মুক্ত করতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আপত্তি দেওয়া হয়নি, উল্টো দেওয়া হয়েছিল অনাপত্তি।

রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জামিন ঠেকাতে এই নীরব সম্মতির পেছনে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদ রউফ। নিয়মিত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সে সময় দেশের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দাপ্তরিক নথিতে দেখা যায়, প্রতিটি জামিন আদেশের বিপরীতে তিনি কোনো আইনি কারণ না দর্শিয়েই ‘অনাপত্তি’ লিখে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেই নিশ্চিত করা হয় যে, এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তিতে সরকারের কোনো আপত্তি নেই।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘বড় সাজ্জাদ’ এর প্রধান সহযোগী। চট্টগ্রামের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি এবং তৈরি পোশাক খাতের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। হত্যা, চাঁদাবাজি এবং অস্ত্রবাজির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৫ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে তাকে গ্রেফতার করা হলে পুলিশ একে একটি ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। বর্তমানে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে।

সাজ্জাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নারও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। তামান্নার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা। স্বামীর গ্রেফতারের পর আদালত ও জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তামান্না। এরপর গত ১০ মে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং তার স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

এমআর/এসএমডব্লিউ