লকডাউন ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে উপস্থিতি বেড়েছে ক্রেতার

দেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সীমান্ত অতিক্রম করে ভয়ংকর ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু।

ভাইরাস তার তাপ ছড়ালেও ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না মানুষদের। আর তাই সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে এবং বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাত দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে উপস্থিতি বেড়েছে ক্রেতার। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে শনিবার থেকে বিক্রি বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ।

সোমবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। কেউ বস্তা হিসেবে চাল কিনছেন, আবার কেউ ভিড় জমিয়েছেন মসলার দোকানে। ক্রেতাদের বেশিরভাগই লকডাউন ও ঈদকে উপলক্ষ করেই কেনাকাটা করছেন। যার পরিমাণটি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

দোকানিদের দেওয়া তথ্য মতে, আগে যেখানে দিনে সব মিলিয়ে ১০০ কেজি মাল বিক্রি হতো সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি। তবে কোনো পণ্যের দাম এখনও বাড়েনি। শুধু ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারাও সুবিধা মতো নিত্যপণ্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে মজুদ করছেন। তারা (ক্রেতা) বলছেন, সামনে ঈদ, তারমধ্যে লকডাউন। কোন সিচুয়েশন হবে সেটা তো বলা যাচ্ছে না। তাই প্রয়োজনীয়টুকু মজুদ করছি।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আলু পিয়াজ বিক্রেতা আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৫দিন স্বাভাবিক বেচা-বিক্রি ছিল। লকডাউন ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে বাজারে উপচে পড়া ভিড়। তার রেশ এখনও কিছুটা আছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো। প্রথমদিকে সাধারণ সময়ের চেয়ে ৪ গুণ বেশি বিক্রি করতে পেরেছি।

একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, সাধারণ সময় দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার চাল বিক্রি হয়। কিন্তু শনিবার ৫৮ হাজার টাকার চাল বিক্রি করেছি। রোববার ও সোমবারও ভালো বিক্রি হয়েছে। কী হয় না হয় সেটা ভেবেই হয়তো মানুষজন দরকারি চালটুকু ঘরে রাখছে।

মশলা ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, আমাদের এখানে যারা আসে তারা রেগুলার কাস্টমার। তবে লকডাউন ঘোষণার পর শনিবার অনেক ভিড় হয়েছে। অনেকটা হিমশিম খাওয়ার মত অবস্থা ছিল। তবে রোববার ও সোমবার একটু চাপ কমেছে।

বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সায়মা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে লকডাউন, তার ওপর ঈদ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এবার বেশ কড়াকড়ি হবে। তাই কিছুটা খাবার সংগ্রহে রাখছি। সব সময়তো বাজার করার সুযোগ হয় না। অন্তত খাদ্যের অনিশ্চয়তায় যেন না পড়তে হয় ততটুকু বাজার করেছি।

এদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাওরান বাজারে সব সময় ভিড় থাকলেও লকডাউন সামনে রেখে রয়েছে বাড়তি ভিড়। বাড়তি বিক্রি করতে পেরে খুশি বিক্রেতারাও। প্রায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের এই কয়েকদিনে বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। তারা বলছেন, হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে পণ্যের দাম এখনও বাড়েনি।

কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মো. বাচ্চু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণ সময় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার চাল বিক্রি করতাম। শনিবারে ১ লাখ টাকার চাল বিক্রি করেছে। রোববার ও সোমবার অনেকটা ভালো গেছে। তবে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন চালের বড় আড়তদাররা। তারা বলছেন, বিক্রি আগের মতোই স্বাভাবিক আছে।

মুদি দোকানের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউন ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে মুদি দোকানগুলোতে। আগে যেখানে ১০০ কেজি বিক্রি করতাম, সেখানে এখন বিক্রি করছি ৩০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কেজি। মুদি দোকানের সবগুলোতেই বর্তমানে একই অবস্থা। শুধু লকডাউন না, মানুষ ঈদের জন্যও কিনতে আসছেন। ধারণা করা যাচ্ছে আগামীকালও বেশি বিক্রি হবে।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি বোঝাই করে ক্রেতারা বাজার নিয়ে যাচ্ছেন। যাদের ততটুকু সামর্থ্য নেই তারা অন্তত ঝাঁকা ভর্তি বাজার করছেন। সবারই একই চিন্তা, ঘরে অন্তত খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।

এমএইচএন/এমএইচএস