স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ঢালাওভাবে দুর্নীতির অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একইসঙ্গে হাসপাতালের বেহাল অবস্থায় দায় এমপিদেরও বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

বুধবার (৩০ জুন) সংসদে বাজেট পাসের প্রতিক্রিয়ার সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে ঢালাওভাবে বললে হবে না। ঢালাওভাবে করাপশনের কথা বললে তো হবে না। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে হবে। মাস্কের কথা বলছেন- সেই মাস্ক কোনোদিনই কেনা হয়নি। কিন্তু মাস্কের কথা আসছে। হুইচ ইজ রং। ভালো করে খতিয়ে দেখে সঠিক কথাটি বলবেন। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, কতবার ডিও (ডেমি অফিশিয়াল) লেটার দেব, আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাব? এক্সরে মেশিন কবে পাব? রেডিওলজিস্ট কবে পাব? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেব? চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেননি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন। 

জাতীয় পার্টির অপর সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্যসেবা আমরা দেখব। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি। 

স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন অনিময় তুলে ধরে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২৫ শতাংশ। এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কি না সেই প্রশ্ন চলে আসছে। 

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। 

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবার সব স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি করোনার চিকিৎসা চলছে। প্রায় এক কোটি লোককে আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। সেখানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। কোভিড-১৯ টেস্ট আমরা প্রায় ৫০ লাখ মানুষের করেছি। সেখানে দুই হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এক লাখ করোনার রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। সেখানে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এসব কাজ আমরা করেছি বিনামূল্যেই। 

তিনি বলেন, অক্সিজেন সেন্টার লাগানো হয়েছে ১০০টি, ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে ১০০টি। আরো অন্যান্য অতিরিক্ত কাজ হয়েছে। এ বছরের এডিপির ১২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল, ভ্যাকসিন বাদ দিলে এর ৮৫ শতাংশ অর্জন হবে। ভ্যাকসিনের ৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলে সেটা ১৫০ শতাংশ আমাদের অর্জন। এই হিসাবটা আমরা করি না। 

হাসপাতালে বেহাল অবস্থার অভিযোগের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব এমপিরা তো হাসপাতালের চেয়ারম্যান। উন্নয়ন কমিটির সঙ্গে আমরা জড়িত। আপনারা প্রত্যেকে দায়িত্বে আছেন। এই বিষয়গুলো আপনাদেরই দেখার কথা। মেশিন চলে না। লোক লাগবে। এগুলো তো আপনাদের দেখতে হবে। কিন্তু আপনারা তো সেটা দেখেন না। নার্স, ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি লাগলে তো আপনাদেরকেই বলতে হবে। শুধু অভিযোগ দিলে তো হবে না। যা যা প্রয়োজন আছে তার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে এগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায়। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই বক্তব্য দেওয়ার সময় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখা যায়।

এ সময় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, সব লকডাউন, আপনারা কেউ তো বাইরে (দেশের বাইরে) যেতে পারেননি। সেবা কোথায় নিচ্ছেন? সবাই বাংলাদেশের হাসপাতালেই সেবা নিচ্ছেন। যেতে তো পারছেন না কোথাও। হাসপাতাল সেই সেবা দিতে পারে বিধায় আপনারা সেবা নিচ্ছেন। ভালো আছেন। 

সংসদ সদস্যদের মাস্ক ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাস্কের কোনো টাকাইতো দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে বললে হবে না। 

জনশক্তির ঘাটতি থাকার কথা জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এই করোনার মধ্যেও আমরা চিকিৎসক, নার্সসহ ২০ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েছি। টেকনিশিয়ান নিয়োগ চলমান রয়েছে। এটা নিয়ে একটা জটিলতা হয়েছিল। অল্পদিনের মধ্যে আমরা এটা সম্পন্ন করতে পারব। মামলার কারণে নিয়োগে কিছুটা সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। 

বিএনপির মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী, মুজিবুল হব চুন্নু স্বাস্থ্যের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। 

করোনাভাইরাসের টিকাও অপ্রতুলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের সদস্যরা। 

এইউএ/জেডএস