বিদেশগামীকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিলেন এসআই আব্দুর রহমান
সৌদিগামী শহিদুলকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন এসআই আব্দুর রহমান/ ছবি : সংগৃহীত
চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। এর মধ্যেই এক বিদেশগামী বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলেন। ফ্লাইট ধরতে হলে সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা। কোথাও কোনো যন্ত্রচালিত যানবাহনের দেখা নেই। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে তিনি ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে পারলেন।
কিন্তু তারপর আর গাড়ি পান না। এদিকে ৯টা বাজতে চলল। ঠিক সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে কি পারবেন না? ফ্লাইট কি মিস করবেন? অস্থিরতা বাড়ছে। এমন সময় সামনে এলেন এক পুলিশ সদস্য। বিপদের কথা খুলে বললেন তাকে। তিনি উত্তরা থানার এসআই (উপপরিদর্শক) আব্দুর রহমান। সব শুনে বললেন, উঠুন আমার মোটরসাইকেলে। ফাঁকা রাস্তায় নিরাপদ গতিতে মোটরসাইকেল টেনে যথাসময়ে পৌঁছে দিলেন বিমানবন্দরে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৩ জুলাই) শুভ্র মল্লিক নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘটনা শেয়ার করেন।
তিনি লেখেন, ‘১ জুলাই ভাগিনা শহিদুলের সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট। সকাল ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকতে হবে। আমরা ধানমন্ডি ৩২ এ আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে পুলিশকে সব বললাম। পুলিশ চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। বলল- ফার্মগেট যান। সেখান থেকে যেতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
কী আর করা- ফার্মগেট চলে গেলাম। এখানেও কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখি এক পুলিশ মোটরসাইকেল নিয়ে আসছেন। পুলিশ ভাইকে থামিয়ে সব বললাম। তিনি বললেন- ওকে, ওঠেন।
প্রথমে বুঝতে পারিনি কী বলছে। পরে আমরা কষ্ট করে উঠলাম। পুলিশ ভাই বিমানবন্দর নামিয়ে দিলেন আমাদের। গাড়ি থেকে নেমে আমার মুখে কোনো কথা আসছে না। হা করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। পুলিশ ভাই বললেন, কী হয়েছে আপনার?
আমি বললাম, আপনাকে কী বলে ধন্যবাদ জানাব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
পুলিশ ভাই বললেন, এটা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা অনেকেই সঠিক দায়িত্ব পালন করি না।
আমি বললাম, ঠিক আছে ভাই। জিজ্ঞেস করলাম- কোন থানায় আছেন আপনি?
পুলিশ ভাই বললেন, উত্তরা থানায়। ভাইয়ের নাম আব্দুর রহমান।
বললাম, ভাই একটা সেলফি প্লিজ। তিনি বললেন- ওকে।
আমি আজ মুগ্ধ। আল্লাহ ভালো রাখুক এরকম জনসেবাকারী পুলিশ ভাইদের।’
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। ১ জুলাই থেকে লকডাউন শুরুর পর সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। বন্ধ আছে অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু আছে। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারছেন। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা এবং বিদেশগামী আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে চলাচল করতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র বহন করে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রজ্ঞাপন অনুসারে, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
টিএইচ/এইচকে