বাইরে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে গুনতে হয় জরিমানা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

কী করেন, কোথায় যাচ্ছেন? ম্যাজিস্ট্রেটের এমন প্রশ্নের জবাবে একটি পার্সেল সার্ভিস কোম্পানির কর্মী বলেন, মিরপুরের অফিসে যাচ্ছি। মোটরসাইকেল অফিসের নাকি নিজের? উত্তরে ওই কর্মী বলেন, অফিসের। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, কাগজ দেখান। কাগজে দেখা গেল মোটরসাইকেলটি তার নিজের। মিথ্যা বলায় সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনা হলো।

এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবেদকের দিকে তাকিয়ে বলেন, নিজের চোখেই দেখলেন মানুষ কীভাবে মিথ্যা বলে! মিথ্যা বলার তো কোনো দরকার ছিল না। এভাবেই হরহামেশা নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে অফিসের কাজের কথা বলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে।

চেকপোস্টে তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেকটি যানবাহনকে

শনিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর কল্যাণপুর ফুটওভার ব্রিজের নিচে পুলিশ চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম কে ইশমাম।

ওই চেকপোস্টে ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ মিথ্যা বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কাগজ দেখতে চাওয়ায় সবকিছু গরমিল হয়ে যায়। কেউ যাচ্ছেন সাভারের অফিসে, কেউ মিরপুর। সবারই জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু ক্রস চেক করতে গেলেই সব উল্টো হয়ে যায়।

চেকপোস্টে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের। ওই পথ ধরে যারা রিকশায় যাচ্ছিলেন, সন্দেহ হলে তাদেরও দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল। অজুহাত ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় ওই চেকপোস্ট থেকে।

মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইশমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে প্রতিষ্ঠানের কাজের অজুহাত দেখাচ্ছেন অনেকেই। এটি মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনার সঙ্গে কোনোভাবেই যাচ্ছে না। অপ্রয়োজনে মানুষ ঘোরাফেরা করছে, লকডাউন দেখতে বেরিয়েছ। এক্ষেত্রে আমরা তাদের জরিমানা করছি। জরুরি সেবার সঙ্গে যারা জড়িত তারা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে যেতে পারছেন।

এদিকে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী ব্রিজে চেকপোস্ট বসিয়েছে দারুস সালাম থানা। এই পথ ধরেই উত্তরবঙ্গের সব গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে। সেখানেও নানা অজুহাতে অনেককে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে উপযুক্ত কারণ ছাড়া পুলিশ কাউকেই এ পথ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে পুলিশের সঙ্গেও ঝগড়ায় জড়াচ্ছেন অনেকে।

এ চেকপোস্টে মো. শিবলু নামে এক শিক্ষার্থীকে জরিমানা করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। তিনি জানান, তার বাসা সাভারে। যাচ্ছিলেন উত্তরায় তাদের মুদি দোকানে। পথিমধ্যে এই চেকপোস্টে পুলিশের মুখোমুখি হন তিনি। পুলিশকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাকে জরিমানা করা হয়।

মামলার বিষয়ে সার্জেন্ট হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি দোকানে যাচ্ছেন সেটি নিয়ে আমাদের কোন বাধা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই। তিনি নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এতে আমরা বুঝতে পারি সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি জানেন। তাই সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় তাকে জরিমানা করা হয়েছে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢাকার বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ।

গাবতলী ব্রিজের পুলিশ চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট জি এম আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে সাধারণ জনগণের মুভমেন্ট অনেক কমে গেছে। যারা ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন তারা জরুরি প্রয়োজনেই যাচ্ছেন। কেউ অসুস্থ, কারও আত্মীয়স্বজন মারা গেছেন এমন কারণেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন অনেকে। আর যাদের মনে হয় অজুহাত দিচ্ছে, তাদের আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি।  আজকে এমন একজনকে ফেরত দিয়েছি যার ভাই মারা গেছেন বলে আমাদের জানান। পরে তার বাড়িতে কল দিয়ে জানলাম, কেউ মারা যায়নি। মানুষ এমন করলে আমাদের আর কী করার থাকে।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, চিকিৎসা সেবায় যারা আছেন, সাংবাদিক, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ জরুরি প্রয়োজনে যারা কাজ করে তাদের ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছি। বাকিদের ফিরিয়ে দিচ্ছি, প্রয়োজনে মামলা দিচ্ছি।

এমএইচএন/এসকেডি