চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৭১৭ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৫৭২ জনই ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব, যা মোট মৃত্যুর ৮০ (৭৯ দশমিক ৭৬) শতাংশ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ৩৬৮ জনের মধ্যে ২৬ হাজার ৩০ জনের বয়স ২১ থেকে থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, যা মোট আক্রান্তের ৪৩ দশমিক ১১ শতাংশ।  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। করোনার শুরু থেকেই বয়স্কদের মৃত্যুহার বেশি। এখনও তা বেশি। কারণ, বয়স্কদের অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকে। করোনা হওয়ার পর সেই রোগগুলো পেয়ে বসে। এসব কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে বৃদ্ধদের মৃত্যুহার বেশি। ৫০ বছরের বেশি বয়সী কারো করোনার লক্ষ্মণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তরুণ ও যুবকদের করোনায় বেশি আক্রান্ত হওয়া সম্পর্কে বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, তরুণ ও যুবক যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকেরই কোনো উপসর্গ ছিল না। যেহেতু উপসর্গ থাকে না অনেকে একসঙ্গে আড্ডা দেন,  ঘোরাঘুরি করেন, ফলে তাদের আক্রান্তের হার বেশি। আক্রান্ত কমাতে বর্তমানে যে লকডাউন চলছে, তার সুফল আরও এক সপ্তাহ পর পাওয়া যাবে। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। 

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রামে রোববার (৪ জুলাই) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে রয়েছেন ৪৬ হাজার ৯৬৭ জন। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলার। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৬০ জন, নারী ২০ হাজার ৩০৮ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩ দশমিক ১১ শতাংশের বয়স ২১ থেকে ৪০ বছর। সংখ্যার হিসাবে যা ২৬ হাজার ৩০ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার ১৮ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, সংখ্যার হিসাবে যা ১০ হাজার ৯০২ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৬৪ জন অর্থাৎ ১৫ দশমিক এক শতাংশ। ষাটোর্ধ্ব করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজার ৩০৩ জন অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীরা। তাদের সংখ্যা এক হাজার ৬১৪ জন, যা মোট আক্রান্তের দুই দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৩৬১ জন অর্থাৎ সাত দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭১৭ জন। এদের মধ্যে ৪৮১ জনই চট্টগ্রাম নগরীর।  নগরীর বাইরের রয়েছেন ২৩৬ জন। চট্টগ্রামে নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি। করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭২ জনেরই বয়স পঞ্চাশের বেশি।

এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে দশ বছরের কম বয়সী চার শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৯২ জন মারা গেছেন। আর ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্য মারা গেছেন ৩৩ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী মারা গেছেন ছয়জন। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মারা গেছে আরও ছয়জন।  

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। সরকার যে কঠোর লকডাউন দিয়েছে, তা পালন করতে হবে। আর কারও করোনার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেএম/আরএইচ