প্রবাসীরা বলছেন, ফাইজারের টিকা ছাড়া কাঙ্খিত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না তারা।  

সৌদি প্রবাসী মো. আলম কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন টিকা নিতে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তাকে জানানো হয়, ফাইজারের টিকা শেষ, নিলে মডার্নার টিকা নিতে হবে। 

কিন্তু আলম ফাইজার ছাড়া অন্য টিকা নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন,‘আমাদের বলেছে, ফাইজারের টিকা ছাড়া সৌদি যাওয়া যাবে না। কিন্তু এরা বলছে অন্য টিকা নিতে, ওইটা তো আমি নেব না।’

আলমের মতো চট্টগ্রাম থেকে টিকা নিতে এসেছেন মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এসএমএস পেয়ে ভোর রাতে কয়েকজন মিলে প্রাইভেট কার ভাড়া করে সকালে টিকা নিতে এসেছি। দুপুর সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।’ 

এরপর তিনি জানতে পারেন ফাইজারের টিকা শেষ, এখন নিলে মডার্নার টিকা নিতে হবে। 

আজ (বুধবার) সকালে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সৌদি আরব ও কুয়েত প্রবাসীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। বেলা ১১টা পর্যন্ত তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ জানায় ফাইজারের টিকা শেষ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালে মডার্নার টিকা আছে প্রবাসীদের জন্য। 

বেলা ১১টা পর্যন্ত ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় ফাইজারের টিকা শেষ। 

কিন্তু যারা টিকা নিতে এসেছিলেন তারা এটার প্রতিবাদ জানান। মডার্নার টিকা নিতে রাজি হচ্ছিলেন না তারা। দুপুর ১২টার দিকে ফাইজারের টিকার জন্য বিক্ষোভও শুরু করেন তারা। 

প্রবাসীরা বলছেন, ফাইজারের টিকা ছাড়া কাঙ্খিত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না তারা।  

প্রবাসীদের বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকা কেন্দ্রের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয় এবং অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সৌদি ও কুয়েত মডার্নার টিকারও অনুমোদন দিয়েছে। এটা বোঝানোর পরও প্রবাসীদের ফাইজারই লাগবে- এমন দাবির কারণে অন্যরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার পর টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। পরে প্রবাসীরা মডার্নার টিকা নিতে রাজি হন।

ফাইজারের টিকা না পেয়ে মডার্নার টিকা নেওয়া এক কুয়েত প্রবাসী জানান, তিনি সন্তুষ্ট না। তাকে যদি কুয়েতে ‘প্রবেশ করতে দেওয়া না হয়’, সে আশঙ্কা করছেন তিনি।  

মডার্নার টিকা নেওয়া সৌদি প্রবাসী সুমন বলেন, আমার ভাই ওখানে থাকে। সে বলছে ফাইজার নিয়ে যেতে। কিন্তু পেলাম তো মডার্নার টিকা। এটা আমি নিতে চাইনি। কিন্তু উপায় না পেয়ে নিলাম। এত টাকা খরচ করে আর তো আসা সম্ভব না।

প্রবাসীদের বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টিকা কেন্দ্রের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয় 

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফাইজারের টিকা নিয়ে তাপমাত্রাগত ঝামেলা হয়। শুরুর দিকে ২০০ প্রবাসীকে ফাইজার দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে বলা হয়, যতটা পারা যায় যেন দেওয়া হয়। আমরা প্রায় হাজারের ওপরে প্রবাসীকে ফাইজারের টিকা দিয়েছি। কিন্তু আজকে শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীদের মডার্না নিতে বলি, তাদের জানাই তারা যে দেশগুলোতে যেতে চায় সে দেশগুলো এ টিকার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু তারা রাজি হয়নি, এ নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে মডার্না নিয়েছে তারা।

৭ জুলাই থেকে সৌদি-কুয়েতগামী প্রবাসীদের ঢাকার সাতটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। সাতটি কেন্দ্রে ২০০ করে মোট ১৪০০ প্রবাসীকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে অবশ্য প্রতিটি কেন্দ্রেই তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আরও বেশি পরিমাণে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। 

এনআই/এনএফ