কাকরাইল-মৎস্য ভবন সড়কে যে কারণে ভোগান্তি
কাকরাইল-মৎস্য ভবন এলাকার সড়কে
কাকরাইল-মৎস্য ভবন এলাকার সড়কটি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। এ সড়কে যানজটে রোজ ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। সড়কটিতে যানজটের মূল কারণ রিকশা-ভ্যানের মতো ধীর গতির যানবাহন এবং অবৈধ পার্কিং বলে মনে করেন সাধারণ যাত্রীরা। এ সমস্যার সমাধান না হলে যানজট নিরসনে কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসবে না বলে অভিমত ট্রাফিক পুলিশ ও সাধারণ জনগণের।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) কাকরাইল-মৎস্য ভবন এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কিছুটা থেমে-থেমে সড়কে গাড়ি চলছে।
বিজ্ঞাপন
কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট আরিফুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ এলাকায় অফিস টাইমে যানজট বেশি হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পর্যন্ত চরম ভোগান্তির পর যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
যানজটের মূল কারণ রিকশা-ভ্যানের মতো ধীরগতির যানবাহন। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের যে লোকবল দরকার তা কম আছে।
রমনা ট্রাফিক জোনের টি আই অ্যাডমিন তরিকুল আলম।
বিজ্ঞাপন
রমনা ট্রাফিক জোনের টি আই অ্যাডমিন তরিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যানজটের মূল কারণ রিকশা-ভ্যানের মতো ধীরগতির যানবাহন। এই এলাকার পাশের সড়কগুলো ভিআইপি। ফলে সেখানে ধীরগতির যানবাহন চলতে পারে না। এতে ধীরগতির যানবাহন এই রাস্তাটি ব্যবহার করে। এটাই এ এলাকার যানজটের মূল কারণ।
সড়কে উন্নয়নকাজের সমন্বয় না থাকা এবং রিকশা-ভ্যান এ এলাকার যানজটের কারণ বলে জানান স্থানীয় জনগণ। তাদের অভিযোগ, কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবৈধ পার্কিং ও পাবলিক বাসের যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। লেগে থাকে যানজট। এ কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি সইতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।
বছরের পর বছর যানজট নিয়ে লেখালেখি ও যানজট দূর করার পরিকল্পনা হলেও নেই কোনো সমাধান। তাই এ নিয়ে এখন কথা বলতেও বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেকে।
সড়কে রিকশা-ভ্যান, উন্নয়নকাজের সমন্বয় না থাকা, কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবৈধ পার্কিং ও পাবলিক বাসের যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় জনগণ।
স্থানীয় জনগণের দাবি, কাকরাইল এলাকার সড়কে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবৈধ পার্কিং গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে অন্যতম এস.এ পরিবহন। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে অবৈধ পার্কিং করে রাখেন। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে অবৈধ পার্কিং রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব যাদের, তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব পার্কিং দেখেও দেখেন না।
কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনের রাস্তায় যানজটে রিকশায় বসে ছিলেন জহিরুল ইসলাম রাসেল। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দেখেন কীভাবে এস.এ পরিবহন এবং হাসপাতালের সামনে অবৈধ পার্কিং গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখল হয়ে আছে। সড়কের যেটুকু উন্মুক্ত আছে, সেখানেও যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। জ্যাম না হওয়ার কি কোনো কারণ আছে?
যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এআরআই এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণা।
তার এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টিআই অ্যাডমিন তরিকুল আলম বলেন, এ দুই প্রতিষ্ঠানের কারণে অসুবিধা হয় না তা বলা যাবে না, তবে এটাই জ্যামের মূল কারণ নয়। মূল কারণ হচ্ছে ধীরগতির যানবাহন। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের যে লোকবল দরকার তা কম আছে।
কাকরাইল চাররাস্তার মোড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে আমাদের ৪ জন কনস্টেবল রয়েছেন। অথচ এখানে কমপক্ষে ৮ জন দরকার।
যানজটের কারণে শুধু মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না, কর্মঘন্টাও নষ্ট হচ্ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়, যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এএইচআর/এইচকে