হাতের ইশারায় গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার
রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের অন্যতম একটি হলো প্রগতি সরণি। এ সড়কে বাস-ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কারসহ প্রতিদিনই চলাচল করে হাজারও গণপরিবহন। এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী-পথচারীরা পারাপার হচ্ছেন রাস্তা। নিজেরাই হাতের ইশারায় সিগন্যাল দিয়ে গাড়ির সামনে দিয়ে পার হচ্ছেন। অনেকে আবার পার হচ্ছেন দৌড়ে কিংবা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে।
এলাকাবাসী ও সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, অধিকাংশ সময়ই জেব্রা ক্রসিংয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা থাকেন না। ফলে রাস্তা পারাপারে অনেক সময়ই ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
তবে পুলিশের দাবি, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে রামপুরা ব্রিজের ট্রাফিক পয়েন্টে এমন চিত্রই দেখা গেছে। শুধু রামপুরার ট্রাফিক পয়েন্টেই নয়, রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, বিমানবন্দরসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা খানম, অসুস্থ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে। লাইন ধরে গাড়ি আসা যাওয়ার কারণে রাস্তা পার হতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। অবশেষে রাস্তা পার হওয়ার পর ঢাকা পোস্টের ক্যামেরা দেখে ক্ষোভ ঝাড়েন। অভিযোগ যেন ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। রামপুরা ব্রিজের আশপাশে ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন অসুস্থ মানুষ, অনেক কষ্ট করেই রাস্তাটা পার হলাম। এখানে জেব্রা ক্রসিং থাকলেও কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই, এভাবে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত রাস্তা পারাপার হতে হয়।’
ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে তাহমিনা বলেন, ‘এখানে একটা ফুটওভার ব্রিজ থাকলে খুবই ভালো হয়। শতশত গাড়ি চলাচলের মধ্যে এভাবে রাস্তা পারাপার হওয়া আমাদের জন্য একটা বড় ঝুঁকি। একটা ফুটওভার ব্রিজ করে দিলে আমার মতো অনেকেরই সুবিধা হবে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকেও আরও দায়িত্ববান হতে হবে।’
ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামপুর এলাকার আরেক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে পুলিশের দায়িত্ব হলো পথচারীদের রাস্তা-পারাপারে সহযোগিতা করা। তা না করে তারা তাদের নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত আছে। বাংলাদেশের পুলিশ কখনওই জনগণের জন্য কাজ করে না এবং করবেও না। তাই তাদের কাছে আমরা তেমন কোনো প্রত্যাশাও করি না। এই দেশ কানাডা, আমেরিকা বা ব্রিটেন নয় যে, আমি সমস্যায় পড়লে তারা এসে আমাকে সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি জানাই, জনগণের জানমালের সুরক্ষার্থে কিছু করুন। পুলিশের কাছে কিছু বলে লাভ নেই। সরকার যদি কান টানে, তাহলে মাথা আসবেই।’
এদিকে, ঝুঁকি নিয়ে এভাবে পথচারী রাস্তা-পারাপার হলেও অনেকটা স্বস্তিতেই সময় কাটাতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। দুই-একজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করলেও অনেককেই গল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাদের।
কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষ ট্রাফিক আইন মানেন না। এ কারণে সড়কে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।
এ বিষয়ে রামপুরা ট্রাফিক জোনে দায়িত্বরত সার্জেন্ট জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা যানজট রোধ ও পথচারী পারাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করি। বিশেষ করে অফিস টাইম শুরু হওয়ার সময়টা ও শেষ হওয়ার সময়টায় আমরা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু অনেক সময়ে মানুষ আমাদের মানতে চায় না। তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি।’
কথা বলার সময়ই পথচারী পারাপারে কোনো ট্রাফিক পুলিশ ক্রসিংয়ে ছিল না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের লোক ছিল এখানে। হয়তো পানি খেতে পুলিশ বক্সের গেছে। আর না হয় ওয়াশরুমে গেছে। কেউ না কেউ সার্বক্ষণিক এখানে অবশ্যই থাকে। জনবল কম থাকায় দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হয়।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে একটু বিশ্রাম নিতে হয়। এছাড়া করোনার ভয়ে অনেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। অনেকেই দায়িত্ব পালন করতে এসে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে বসে থাকেন।
যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা-
রাজধানীর সড়কে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামবিওর প্রকাশিত ‘ট্রাফিক ইনডেক্স ২০১৯’-এ কলকাতাকে পিছিয়ে ফেলে ছিল শীর্ষ স্থান দখল করেছিল ঢাকা। এর আগে ২০১৮ ও ২০১৭ সালে সূচকটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দেশের রাজধানী। আর ২০১৬ সালে তৃতীয় ও ২০১৫ সালে এ অবস্থান ছিল অষ্টম। অর্থাৎ ঢাকায় যানজটের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে।
টিআই/এফআর