করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই ঈদ যাত্রায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের তৃতীয় দিন আজ। ঈদ উপলক্ষে গত দুই দিনে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ, কমলাপুর ও সদরঘাটে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

গেল দুই দিনের ধারাবাহিকতা আজও গাবতলীতে অব্যাহত রয়েছে। তবে যাত্রীর চাপে নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করতে দেখা গেছে কাউন্টারগুলোকে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করার কথা থাকলেও সেই নিয়ম মানছে না অনেক পরিবহন। অন্যদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া। তবে সিট দেওয়া হচ্ছে একটিই। অর্থাৎ সব সিটেরই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। শনিবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কাউন্টারে টিকিটের কথা জিজ্ঞেস করা হলেই কাউন্টার মাস্টাররা জানিয়ে দিচ্ছেন টিকিট নেই। কিন্তু যেসব বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে বা যাচ্ছে এমন গাড়ির টিকিট সহসাই মিলছে। তবে যাত্রীকে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এসব বিষয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গেলে লস (ক্ষতি) হবে তাই শতভাগ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। তবে যারা অতিরিক্ত ভাড়া দিচ্ছেন, তারা দুটি করে সিট পাচ্ছেন।

কথা হয় ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাগামী যাত্রী মো. শুকুর আলীর সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি আগামীকাল (রোববার) রাতে দর্শনা যেতে টিকিট কিনতে এসেছি। জে লাইন পরিবহনে এসে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, টিকিট আছে তবে একেবারে পেছনে। পরে আমি জানতে চাইলাম ভাড়া কত? কাউন্টার থেকে বলা হয়, এক হাজার টাকা। আমি এটা জানতে চাইলাম পাশের সিট ফাঁকা যাবে কি না। তারা বলে পাশের সিট ফাঁকা গেলে আমাদের লস হচ্ছে। এজন্য পরিস্থিতি বুঝে গাড়ি ছাড়ার আগে বলতে পারব। তবে এখন টিকিট নিতে হলে এক হাজার টাকা দিয়েই নিতে হবে বলে জানান তারা।

মাগুরাগামী যাত্রী আশরাফ বলেন, পরিবহনগুলো সরকারের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে প্রতিটি সেট বিক্রি করছে। সেই সঙ্গে ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছে। এটা তো এক প্রকার ডাকাতি। এই অনিয়ম দেখার কি কেউ নেই? আমরা তাদের কাছে জিম্মি, কারণ আমাদের তো বাড়িতে যেতেই হবে।

এ বিষয়ে জে লাইনের কাউন্টার মাস্টার মো. হাবিব বলেন, রাস্তায় গাড়ি নামানো মানেই খরচ আর খরচ। গাড়ি রাস্তায় নামালে রাস্তার একটা খরচ থাকে আবার মবিল খরচ থাকে। ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা হলে সেখানেও খরচ। আবার ঢাকা থেকে গন্তব্যে যেতে তেল খরচ থাকে। এদিকে অর্ধেক যাত্রী এবং ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিলে গাড়ির খরচের টাকাই উঠে না। এছাড়া ঘাটে প্রচুর যানজট। যার কারণে গাড়ি গিয়ে আবার সময় মতো ফিরতে পারছে না। কিন্তু যাত্রী তো সময় মতো পাঠাতে হবে। এজন্যই প্রতি সিটে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে ঈদে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। কারণ ৬০ ভাড়া বেশি নিলে আমাদের বা মালিকের কিছু থাকে না। গাবতলী কাউন্টারে প্রায় সবাই গোপনে দ্বিগুণ ভাড়া এবং শতভাগ সিট বিক্রি করছে। আর আমাদের মালিক পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে। সুতরাং আমাদেরও কিছু করার নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কমফোর্ট লাইন পরিবহন, দিগন্ত পরিবহন, এস বি পরিবহন, জামান এন্টারপ্রাইজসহ আরও কয়েকটি পরিবহন সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শতভাগ সিটের টিকিট বিক্রি করছে। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা একই কথা বললেন। ঈদের সময় এত অল্প যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাতে নারাজ পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা।

এসআর/এসএসএইচ