প্রয়োজনে সব বাধা টপকে চলার নামই জীবন। যতটুকু পথ খোলা, তা দিয়ে ছুটে চলাই জীবনের ধর্ম। সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন রবিন নামের এক যুবক। কঠোর বিধিনিষেধে (লকডাউনে) জীবিকার তাগিদে যশোর থেকে তিনি প্রায় ২০০ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন। 

শনিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর প্রবেশদ্বার গাবতলী দিয়ে তিনি ঢাকায় ঢোকেন। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রবিনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের। 

রবিন বলেন, আমার বাড়ি চাঁদপুর। যশোরের কেশবপুরে গিয়েছিলাম অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে। ঈদের আগে বাসে করে গিয়েছি। কিন্তু ফেরার আগেই লকডাউন শুরু হয়ে গেল। তাই বিপাকে পড়েছি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে না ফিরে উপায় নেই। তাই সাইকেল নিয়েই রওনা হয়েছি। 

খোলা আকাশের নিচে পথে রাত কাটাতে হলেও রাজধানীতে ফিরে সরকারের বিধিনিষেধ নিয়ে অভিযোগ নেই রবিনের।

তিনি বলেন, অনেকেই ট্রাকে বা নানা অবৈধ উপায়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করছেন। আমি সেটা করিনি। সোজা পথে চলেছি। বৈধ উপায়ে ঢাকায় ফেরার যে সুযোগ ছিল সেটাই ব্যবহার করেছি। তাই যশোর থেকে সাইকেল চালিয়েই ফিরলাম। কষ্ট হয়েছে। রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে। কিন্তু কোনো ‘গিল্টি ফিলিংস’ নাই।  

লকডাউন নিয়ে অভিযোগ নেই রবিনের

রবিন আরও বলেন, পরিস্থিতি সব সময় অনুকূলে থাকবে না। কিন্তু কোনো না কোনো পথ খোলা থাকবে। বেআইনি পথ হয়ত সহজে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কিন্তু বৈধ উপায়টি বেছে নিলে আপনার জীবনে শান্তি থাকবে। 

তিনি বলেন, তাড়াহুড়া করিনি। দূরের গন্তব্য তাই ছুটেছি ধীরেসুস্থে। গতকাল রাতে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছেছি। চায়ের দোকানের বেঞ্চে ঘুমিয়েছি। ফ্রেশ হয়ে আবার রওনা করেছি আজ।

রবিন বলেন, লকডাউন চলছে। দেশে করোনার যে পরিস্থিতি এটা মানতে হবে। কিন্তু কাজ না করলে পেটে খাবার জুটবে না। মাস গেলে বাসা ভাড়া, সংসার খরচ কিছুই থেমে থাকে না। তাই রাস্তায় বের হয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটা সম্ভব নিজেকে ও অন্যকে সুরক্ষিত রেখে এখন কাজ করতে হবে। 

রাজধানীর চিত্র 

ঈদ পরবর্তী চলমান কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন চলছে। আজ শনিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীতে জরুরি সেবা ও রিকশা ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পুলিশের চেকপোস্টও লক্ষ্য করা যায়নি। 

ঢাকার বাইরে থেকে রাজধানীতে প্রবেশদ্বারে পুলিশ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাড়িই ছাড়ছে না পুলিশ। তবে অনেকেই পথে বিভিন্ন যানবাহন বদলে ভেঙে ভেঙে রাজধানীতে আসছেন। আমিনবাজার এলাকায় নেমে অনেককেই হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করতে সরেজমিনে দেখা গেছে। এছাড়া মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও রিকশায়ও রাজধানীতে প্রবেশ করছে মানুষ।

উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। এ সময় গার্মেন্টস ও কলকারখানা বন্ধ রয়েছে। বিধিনিষেধ চলাকালে খুলবে না। এবারের বিধিনিষেধ গতবারের চেয়ে কঠোর হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

এসআর/এইচকে