শয্যা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা
শয্যা না পেয়ে বারান্দায় রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে
ঢাকার নবাবগঞ্জের বাসিন্দা কলিক খান করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন বড় ভাই অনিক খান। সঙ্গে এসেছেন মা ও ছোট বোন।
সকাল ১০টায় হাসপাতালে এলেও করোনা ইউনিটে শয্যা না পাওয়ায় বারান্দায় চেয়ারে বসিয়েই ভাইকে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দিচ্ছেন অনিক। শুধু কলিক খান নন, তার মতো অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সাধারণ শয্যা পেতে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে অনিক বলেন, আমার ভাই গত ৮-১০ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। শুক্রবার রাত থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। গত কয়েকদিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে সিট না পাওয়ায় বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। পরিচিত একজন চিকিৎসক বলেছেন, শয্যা ম্যানেজ করে দেবেন। সে আশায় অপেক্ষা করছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সাধারণ শয্যা রয়েছে ২৪০টি আর আইসিইউ শয্যা ২০টি। বর্তমানে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সাধারণের মধ্যে ২০টির মতো খালি আছে বলা হলেও রোগীদের শয্যা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে বিএসএমএমইউতে গিয়ে দেখা যায়, যে ভবনে করোনা ইউনিট এবং নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেটির সামনে অনেকে অপেক্ষমাণ। এদের কেউ এসেছেন নমুনা পরীক্ষা করাতে, আবার কেউ এসেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতে। কেউবা এসেছেন হাসপাতালে ভর্তি স্বজনের কোনো কিছু দরকার পড়ে কি না, সে বিষয়টি দেখভাল করতে।
হাসপাতালে নমুনা প্রদান কক্ষের বাইরে চেয়ারে আধশোয়া রয়েছেন রীনা দাস নামে এক বয়স্ক নারী। পাশে বসে আছেন তার ছেলে অরবিন্দ দাস। অরবিন্দ বলেন, মা কে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে এসেছি। বেশ কদিন ধরে মায়ের জ্বর, সঙ্গে হালকা কাশিও। অনলাইনে করোনা পরীক্ষার নিবন্ধন করা আছে। কিন্তু সিরিয়াল পেতে দেরি হচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে মা চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে একবার মায়ের করোনা পরীক্ষা করালে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু দিনদিন মায়ের জ্বর বাড়ছে, সঙ্গে কাশিও। তাই এখানে নিয়ে এসেছি। রিপোর্ট পজিটিভ হলে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাব। কিন্তু করোনা ইউনিটে কথা বলে জানতে পারলাম সিট খালি নেই। তাই এখন অন্য হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছি।
করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা দুজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ রাজি হননি। তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো রোগী সুস্থ হয়ে বের হয়ে গেলে বা মারা গেলে সাধারণত আইসিইউ খালি হয়। না হলে আইসিইউ খালি পাওয়া দুষ্কর। এক্ষেত্রে কোনো রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলেও আমাদের কিছু করার থাকে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অনেক রোগী ম্যানেজ করতে হয়। ইউনিটের পাশাপাশি ফিল্ড হাসপাতাল ও ফিভার ক্লিনিকে এসব রোগী ম্যানেজ করছি।
এএইচআর/আরএইচ