সকাল ১১টায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল-২ করোনা ইউনিটের সামনে। তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢামেকে ভর্তির জন্য এসেছেন করোনা পজিটিভ মো. ফরিদ উদ্দিন (৬৬)। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। মাথার কাছে আরও তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা।

কিন্তু করোনা ইউনিটে শয্যা খালি না থাকায় ভর্তি হতে পারছেন না তিনি। তাই শয্যার আশায় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে। 

শুধু ফরিদ উদ্দিনই নয়, তার মতো অসংখ্য রোগী শয্যার জন্য অপেক্ষা করছেন অ্যাম্বুলেন্স কিংবা হাসপাতালের করিডোরে। আবার অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে শয্যা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢামেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু সে তুলনায় রোগী ছাড়পত্র পাচ্ছেন কম। এ জন্য নতুন রোগীদের শয্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল-২ করোনা ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী আসছেন করোনা ইউনিটে। শয্যা ফাঁকা নেই, তারপরও রোগী আসছেন একের পর এক। সবাই চেষ্টা করছেন এখানে ভর্তি হওয়ার। সারি সারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে শয্যার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। রোগী মারা গেলে কিংবা ছাড়পত্র দেওয়া হলে তবেই মিলছে শয্যা।

কথা হয় কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা শহীদ উদ্দিনের মেয়ে তামান্না হক মমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৫ জুলাই আমার বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওই দিনই করোনা পরীক্ষা জন্য নমুনা দেওয়া হয়। ২৬ জুলাই করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ক্রমেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পালস কমতে শুরু করে। ওই হাসপাতালে অক্সিজেন থাকলেও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা না থাকায় ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ১১টায় এসেছি ঢাকা মেডিকেলে। বেলা ১২টায় শয্যা পাই। শয্যা পাওয়ার আগ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।

আইসিইউ ইউনিটে শয্যা খালি না থাকায় অন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে ফেনীর অসীম কুমার দাসকে

গত ১৭ দিন ধরে ঢামেকের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফেনীর অসীম কুমার দাস (২৬)। আজ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউয়ের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ঢামেকে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় অন্য হাসপাতালে নিতে হয় তাকে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান থেকে করোনা পজিটিভ স্ত্রীকে নিয়ে ঢামেকে এসেছেন আয়নাল হক। কিন্তু শয্যা না পাওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সেই অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাকে। কিছুক্ষণ পরপর স্ত্রীর মুখে পানি দিচ্ছিলেন আয়নাল হক।

আয়নাল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রীর অনেক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অবস্থা বেশি ভালো নয়।

মুখে পানি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, শ্বাস নিতে নিতে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য একটু পরপর মুখে পানি দিচ্ছি। শয্যা পাইনি তাই অপেক্ষা করছি অ্যাম্বুলেন্সেই।

খোঁজ নিয়ে জনা যায়, শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ঢামেকের করোনা ইউনিটে ছয়জন রোগী মারা গেছেন। আরও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাছাড়া যাদের অবস্থা খারাপ তাদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউয়ে শয্যা খালি না থাকায় অন্য হাসপাতালে রোগী রেফার্ড করছেন চিকিৎসকরা।  

স্ত্রীর মুখে পানি দিচ্ছেন আয়নাল হক

ঢামেক হাসপাতাল-২ এর ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢামেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছেন। শয্যা ফাঁকা নেই, তাই সব রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো রোগী মারা গেলে কিংবা ছাড়পত্র পেলে তবেই রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া যাদের আইসিইউ প্রয়োজন তাদের অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সার্বিক বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে করোনা ইউনিটের কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। এমনকি আইসিইউয়ের সব শয্যাও রোগীতে পূর্ণ।  করোনা ইউনিটে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে আরও ৫০টি অতিরিক্ত শয্যা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানেও রোগী ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে প্রতিদিনই রোগী আসছেন ঢামেকে। কিন্তু শয্যা সংকটের কারণে সবাইকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আমরা নিরুপায়। আমাদের এখানে শয্যা ফাঁকা হলেই রোগী ভর্তি নিতে পারছি।

এসএএ/এনআই/এসকেডি