আইসিইউয়ের খোঁজে ঘুরছেন রোগীর স্বজনরা
এনামুল হকের বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাধারণ বেডে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী আব্দুর রহমানকে আইসিইউতে ভর্তি করানো দরকার। কিন্তু যেখানে তিনি বর্তমানে ভর্তি আছেন সেখানে আইসিইউ ফাঁকা নেই। এনামুল হক তাই সকাল সকাল মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) খোঁজ নিতে এসেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন বাইরের হাসপাতাল থেকে রোগী এনে এখানকার আইসিইউতে ভর্তি করানোর মতো শয্যা ফাঁকা নেই।
বিজ্ঞাপন
এনামুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বাবা বেশ কিছু দিন ধরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি। তাকে আইসিইউতে নেওয়া জরুরি। কুর্মিটোলায় আইসিইউ ফাঁকা নেই। তাই আমি এই হাসপাতালে এসেছি আইসিইউয়ের খোঁজ নিতে। কিন্তু এখানেও বাইরে থেকে এনে রোগী ভর্তি করানোর জন্য আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই বলে জানিয়েছে। আমার মতো ঢাকা শহরের অনেক হাসপাতাল থেকেই রোগীর স্বজনরা এখানে আইসিইউয়ের খোঁজে আসছেন। কারণ, এটা একটা বড় হাসপাতাল।
মনিরুল ইসলাম নামের আরও একজন রোগীর স্বজন এখানে এসেছেন আইসিইউয়ের খোঁজে। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমার মা ভর্তি আছেন। কিন্তু সেখানে অনেক খরচ। তাই এই হাসপাতালে এসে আইসিইউয়ের খোঁজ নিলাম ফাঁকে আছে কি না। কিন্তু তারা জানাল আইসিইউ ফাঁকা নেই। খবরে দেখেছি, এটা বড় হাসপাতাল। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভালো। তবে ফিরে যেতে হচ্ছে। কারণ, এখানে সাধারণ বেড ফাঁকা আছে, তবে আইসিইউ ফাঁকা নেই।
বিজ্ঞাপন
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের ৫৫৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ৫৩৮টি। এছাড়া ২১২টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ১৯টি, কোভিড এইচডিইউ ২৮৮ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ৩৪টি, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার আছে ১২১টি, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর আছে ৮২টি। এছাড়া হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে।
এদিকে, হাসপাতালটির তথ্য ডেস্কে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক রোগীর স্বজনরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আমাদের এখানে আইসিইউয়ের খোঁজে আসছেন। কিন্তু আমাদের আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের এখানে যে অল্প সংখ্যক আইসিইউ সিট রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু রিজার্ভ রাখা হয়েছে। হঠাৎ যদি সাধারণ বেডের কোনো রোগীর খারাপ হয়ে যায় তাহলে তাকে যেন দ্রুত স্থানান্তরিত করা যায়। এছাড়াও গর্ভবতী নারী, বয়স্ক রোগী এমন কয়েকটা ক্যাটাগরিতে অল্প সংখ্যক আইসিইউ রিজার্ভ রাখা হয়।
হাসপাতালটির ভেতরে তথ্য সম্বলিত বোর্ডে লেখা রয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন, এইচডিইউতে ভর্তি রয়েছেন ২৭০ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ট্রায়াজে আগত রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন, যার মধ্যে ২৭ জন পুরুষ এবং ৪০ জন মহিলা। এদিকে গত ১৯ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে আগত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৪৮ জনে।
হাসপাতালটিতে করোনা নিয়ে ভর্তি থাকা একজন রোগীর স্বজন সাজ্জাদ হোসেন এখানকার সার্বিক পরিবেশ সম্পর্কে বলেতে গিয়ে জানান, এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো, উন্নত। কিন্তু ব্যবস্থাপনার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ভেতরে ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। রোগীরা যেখানে থাকেন সেখানে অনেকটাই নোংরা পরিবেশ। বাথরুমগুলো অপরিষ্কার। যে কারণে এখানকার বেশিরভাগ রোগীর স্বজনরা বাইরে যান। এছাড়া চিকিৎসার দিক থেকে বেশ ভালো এখানকার অবস্থা। তবে কিছু কিছু নার্স চিকিৎসক সহযোগীরা খারাপ ব্যবহার করে, তারা আন্তরিক না।
অন্যদিকে, রোববার (১৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোববার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৭৫ জনে।
এক দিনে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯০২ জনে।
এর আগে শনিবার ১৭৮, শুক্রবার ১৯৭, বৃহস্পতিবার ২১৫, বুধবার ২৩৭, মঙ্গলবার ২৬৪ ও সোমবার ২৪৫ জনের মৃত্যু হয়। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এরপর থেকে প্রায় এক মাস প্রতিদিন ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২শর নিচে নামে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৩৭১ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৮ জন।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৪০৩ জনের। পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৩ হাজার ১টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৫২১টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
এএসএস/এইচকে