প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাত্রা শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল। শুরুতে ৩৫৭ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল দ্রুতই এক হাজার শয্যায় রূপান্তর করার। তবে রোগীর চাপ না থাকায় আপাতত শয্যা বাড়ানো হচ্ছে না।

বুধবার (১৮ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বিএসএমএমইউ'র অ্যানেস্থিসিয়া অ্যান্ড আইসিইউ ডিপার্টমেন্ট কনসালটেন্ট ডা. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় আমাদের ওপরও তেমন চাপ নেই। আইসিইউ, এইচডিইউগুলোর সব শয্যাই প্রায় পূর্ণ, তবে সাধারণ শয্যা অনেকগুলোই খালি আছে।

সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৩৬০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ১৫৪ জন রোগী। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪৭ জন।

এছাড়া বিএসএমএমইউয়ের কেবিন ব্লকে করোনা সেন্টারে ১২ হাজার ৪শ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৪শ ৩১ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫ হাজার ৩শ ৫০ জন। বর্তমানে করোনা সেন্টারে ভর্তি আছেন ১৬৪ জন। আইসিইউতে  ভর্তি আছেন ১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন। 

ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেকটা প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে শুরু হলেও এখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। শয্যা সংখ্যা আগে যা ছিল ৩৫৭টি, এখনও তাই আছে। বেড সংখ্যা হয়ত আপাতত বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ এগুলোতে তো আসলে জনবল লাগে অনেক। হঠাৎ করেই এত জনবল যুক্ত করাটা কঠিন। তবে দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের বেড সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। হাসপাতালের উপরের তলাগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা আছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন তো দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি একটু নিচের দিকে। কোভিড ডেডিকেটেড অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে তো রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এজন্য এখানে আপাতত বেড বাড়ানোর আর পরিকল্পনা নেই, তবে যদি ঊর্ধ্বগতি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের প্রস্তুতি আছে।

এর আগে গত ৭ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ফিল্ড হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।

তখন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম দিনে ৩৫৭টি শয্যা নিয়ে আমরা হাসপাতালটি শুরু করেছি। প্রতিটি শয্যাতেই আইসিইউ রয়েছে। সবমিলিয়ে শিগগিরই হাজার শয্যার হাসপাতাল হবে এটি।

যা রয়েছে ফিল্ড হাসপাতালে

ফিল্ড হাসপাতালটিতে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আধুনিক লিফট, এস্কেলেটর এবং উন্নত টয়লেট ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য দশ হাজার লিটারের একটি অক্সিজেন ভিআই ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সদের ওয়ার্ড এবং আইসিইউয়ের ভেতরে পর্যবেক্ষণ ডেস্ক রাখা হয়েছে। রোগীদের জন্য পথ্য, সুপেয় পানি, জরুরি ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়া রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালে।

টিআই/জেডএস