মানুষ দেখলেই ভেংচি কাটে বাচ্চা বানরটি/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

দীর্ঘদিন মানুষের পা পড়েনি রাজধানীর চিড়িয়াখানার রাস্তাগুলোয়। ফলে রাস্তায় শ্যাওলা জমে সবুজ ও পিচ্ছিল হয়ে গেছে। পুরো এলাকায় বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। মাঝে মধ্যে সেই নীরবতা ভেঙে ডাক শোনা যায় বাঘের। এছাড়া রাজ ধনেশ ও ময়ূরের আওয়াজও জানান দেয় রাজত্ব এখন তাদের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২০২০ সাল থেকে সরকার দফায় দফায় সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গত বছর ১০ নভেম্বর খুলেছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। পরে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে চলতি বছর ২ এপ্রিল আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয় চিড়িয়াখানা। তবে নতুন করে এখনও জাতীয় চিড়িয়াখানা খোলার আভাস পাওয়া যায়নি। ফলে ১৪১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানাটি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিড়িয়াখানাও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

দেখা গেছে, কিউরেটরের কার্যালয় থেকে ডান দিক দিয়ে প্রবেশ করলেই শুরুতে চোখে পড়বে হরিণের শেড। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জায়গা নিয়ে রাখা হয়েছে হরিণদের। হরিণের শেডের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই, মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে হরিণগুলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে হরিণগুলোও ধীরে ধীরে কাছে আসবে। তবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও আফ্রিকান সিংহ কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না।

এদিকে রেসাস বানরগুলো রীতিমতো সংসার পাতিয়ে বসেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করছে। বাচ্চা বানরটা আপনার সঙ্গে দুষ্টুমি করতে পারে, মুখ ভেংচি দিতে পারে। কিন্তু বুড়ো দুটো আপনাকে পাত্তাই দেবে না। সাপগুলোকে অনেকটা মৃতপ্রায় মনে হয়েছে। কে জানে, হয়তো তারা বিশ্রাম নিচ্ছে। একই অবস্থায় দেখা গেছে কুমিরগুলোকেও। জলহস্তীগুলোকে একটু দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।

পাখিদের মধ্যে তিলবাজ, ভুবন চিল, শঙ্খচিল এবং সার্পেন্ট বাজগুলো তাদের শেডে এক কোনায় অবস্থান নিয়ে বসে আছে। ময়না পাখির শেডের কাছে গেলে আপনাকে শুনতে হবে, ‘কেমন আছ, ভালো আছ?’ অনবরত তাদের মিষ্টি কণ্ঠের এই ডাক অন্তত ১৫-২০ মিনিট খাঁচার কাছে রাখতে বাধ্য করবে।

চিড়িয়াখানায় থাকা জিরাফগুলো আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে কোনো দ্বিধা করবে না। জিরাফের শেডের কাছে গিয়ে দেখা গেল, ছোট বড় সব মিলিয়ে আটটি জিরাফ রয়েছে। এদের মধ্যে বাচ্চা জিরাফগুলো স্বয়ং আপনাকে দেখতে লম্বা ঘাড় নিয়ে কাছে চলে আসবে। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা আছে সেখানে। এই দুষ্টু বাচ্চাগুলো এমনভাবে আপনাকে দেখবে যেন মনে হবে তারাই আপনাকে দেখতে এসেছে, আপনি নন। ডোরাকাটা জেব্রাগুলোও আপনার সান্নিধ্য চাইবে। হাতিগুলো নিরুপায় দৃষ্টিতে আপনাকে দেখবে। আর অতি চালাক শিয়াল মামা আছে শুধু দৌড়ের উপর। আপনি এক পা পেছালে সে তিন পা এগিয়ে আসবে। আর আপনি এক পা আগালে সে ১০ পা পেছাবে।

এছাড়া চিড়িয়াখানার এ থমথমে পরিবেশের মধ্য দিয়ে আপনি হাঁটতে থাকলে মনে হবে কেউ আপনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই পর্যবেক্ষণ আর কেউ নয়, কাঠবিড়ালি। আপনার ডানে-বামে, সামনে-পেছনে এমন কোনো জায়গা নেই বা আপনার চোখ পড়বে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তাদের আপনি দেখবেন না।

২১০ দিনে চিড়িয়াখানায় জন্মেছে প্রায় ১৮০টি প্রাণী

বিধিনিষেধের সময় চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো ছিল দর্শনার্থীদের জ্বালাতন থেকে মুক্ত। একেবারে নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিল তারা। এ সময় নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের খাবারের মান। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাদের ইমিউনিটি সিস্টেমের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। তাই এ বছর জানুয়ারি থেকে জালাই মাস পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি জন্ম নিয়েছে প্রায় ১৮০টি প্রাণীর।

এগুলোর মধ্যে জলহস্তী একটি; গাধা ৩টি; বানার ২টি; ইম্পালা ২টি; জেব্রা ২টি; আফ্রিকান হর্স ৩টি; মায়া হরিণ ২টি; চিত্রা হরিণ ১৬টি; ইমু পাখি ১৭টি; ময়ূর রয়েছে একশর বেশি।

সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট চিড়িয়াখানার খাঁচায় দেওয়া হয়েছে দুটি বাঘ শাবককে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পুরুষ বাঘ শাবকের নাম 'দুর্জয়' এবং মেয়ে বাঘ শাবকের নাম 'অবন্তিকা' রাখেন।

এমএইচএন/এসকেডি