চট্টগ্রাম নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত টাইগারপাসকে রক্ষা করতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে  চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠন। 

রোববার (২২ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিপ্লবের তীর্থস্থান চট্টগ্রামের অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক ও প্রাকৃতিক এসব ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তাই ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য টাইগারপাস যেন তার আদিরূপে থাকে, আমরা সেই আকুতিই জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ঐতিহ্য আমরা হারিয়েছি। চট্টগ্রাম অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনও অপরূপ হয়ে আছে প্রকৃতির অপার দান পাহাড়-নদী-সাগরের কল্যাণে। সেই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যও আমরা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি বলে আগামীর চট্টগ্রামের চেহারা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার সরকার চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এর সঙ্গে সংযুক্ত পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ নির্মিত হয়েছে। প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার এবং মুরাদপুর-বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ীত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দরসহ হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও পরিধি আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে এটি আরও একটি মাইলফলক হিসেবে সংযোজিত হবে। তবে, পরিবেশ-প্রকৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদ থেকে টাইগারপাসের প্রকৃতি প্রদত্ত অপরূপ নান্দনিক সৌন্দর্য যেন ইট-পাথরের কংক্রিটের নিচে ঢেকে না পড়ে।

টাইগারপাস মোড় থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশটুকু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে সাবেক এই মেয়র বলেন, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই টাইগারপাসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপে রক্ষা পেতে পারে। 

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তটি টাইগারপাসের পরিবর্তে দেওয়ানহাট ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে নামানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, তাহলে আমাদের ঐতিহ্যের টাইগারপাস যেমন রক্ষা পাবে তেমনি  এক হাজার কোটি টাকার মত প্রকল্প ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে তিনি বলেন, দেওয়ানহাট মোড় থেকে নৌবাহিনী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে যে পুরানো রাস্তাটি আছে (দেওয়ানহাট ব্রিজ হওয়ার পর যেটি বন্ধ রাখা হয়েছে) তা আবার চালু করে সেখানে রেললাইনের ওপর ওভারপাস তৈরি করলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমে যানবাহন এই ওভারপাস হয়ে টাইগারপাস অতিক্রম করবে। বিদ্যমান রেলওয়ে ব্রিজটির যেহেতু মেয়াদ শেষ তা ভেঙে সেখানেও নতুন করে আর একটি ওভারপাস তৈরি করা হলে সেটি দিয়ে আগ্রাবাদমুখী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্লাইওভারটি যদি টাইগারপাসের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তা হবে খুবই বিপজ্জনক। ধনিয়ালাপাড়া থেকে মনসুরাবাদের দিকে যে ফ্লাইওভারটি গেছে তার ওপর দিয়ে আনতে হবে লালখান বাজারমুখী ফ্লাইওভারটি। এতে এটি আনতে হবে ৮০ ফুট উচ্চতায়। ব্যস্ততম এই রুটে যেখান দিয়ে বন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহনও চলাচল করে সেসব যান এত উঁচুতে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হবে। ব্যস্ততম রুটে যান চলাচল বারবার বিঘ্নিত হবে। 

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের যে লুপটি ষোলশহর ২ নং গেট থেকে বায়েজিদের দিকে নেমে গেছে সেখানে ওটার মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ‘ভারী যানবাহন ওঠা নিষেধ’ লেখা ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে উচ্চতায় সেখানে ভারী যানবাহন উঠতে পারছে না তার চেয়েও বেশি উচ্চতায় দেওয়ানহাট-টাইগারপাস ফ্লাইওভারে কীভাবে উঠবে? ভারি যানবাহনই যদি চলাচল না করতে পারে তাহলে সেই ফ্লাইওভার কেন?

ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ নেতারা বলেন, টাইগারপাস এলাকায় ফ্লাইওভার তৈরি করে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও এই জায়গায় ফ্লাইওভার না করতে নকশা পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছেন সিডিএকে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও সদস্য সচিব জসীম উদ্দিন চৌধুরী সবুজ।

কেএম/ওএফ